ঢাকা     সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৮ ১৪৩১

বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের তাগিদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪  
বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের তাগিদ

‘জলবায়ু ও পানি’ আলোচনায় রাজনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোকে বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে উজানের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করার পরামর্শ দিয়েছেন জলবায়ু ও নদী গবেষকরা। একই সঙ্গে পানি ও নদী ব্যবস্থাপনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা করে টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার তাগিদও দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ‘নদীর অধিকার: সমন্বিত অববাহিকা ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক অধিবেশনে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

‘পানি, নদী এবং জলবায়ু পরিবর্তন: সহিষ্ণুতার ক্ষেত্র নির্মাণ’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী ৯ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন শেষ হয়েছে।

এ বছর ১০টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হয় পানি সম্মেলন। বিষয়গুলো হলো- জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদীর অধিকারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক; জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদী: ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা; উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তি এবং সহিষ্ণুতা; পানি, নদী এবং শহুরে সহিষ্ণুতা: অবকাঠামো এবং বাস্তুতন্ত্র; নদী, সহিষ্ণুতা এবং জনগণ; নদীর অধিকার: অববাহিকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা; বহুপাক্ষিক পানি সহযোগিতা এবং ন্যায্যতা; জীবন্ত জাদুঘর এবং স্থানীয় সম্প্রদায়সমূহের সহিষ্ণুতা; পানি এবং নদী: তরুণদের সম্পৃক্ততা টেকসই ভবিষ্যৎ: প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় উজানের দেশগুলো ভাটির দেশগুলোর সাথে আলোচনায় বসতে চায় না’।

এসব দেশের মধ্যে বেশিরভাগ চুক্তিই হল প্রতিক্রিয়াশীল। যা উজানের বা শক্তিশালী দেশগুলোর দ্বারা একতরফাভাবে করা হয়ে থাকে। তারা পানি ও নদী বিরোধের সমাধান বহুপাক্ষিকের পরিবর্তে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় করে থাকে। অথচ এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে বহুপাক্ষিক আলোচনা দরকার।
 
অধিবেশনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সি৩ইআর) ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু এবং পানি আলোচনার ক্ষেত্রে রাজনীতি বোঝা অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্যভাবে খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এবং এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পানি অপরিহার্য। জলবায়ু রাজনীতি ভালভাবে বোঝার মাধ্যমে আমাদের জলবায়ু ন্যায্যতার পক্ষে দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে।’

‘নদী, সহিষ্ণুতা এবং মানুষ’ শীর্ষক এক অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ওয়াটারএইড বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ড. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বেশিরভাগ সভ্যতাই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে। আমরা এখন নদীর অবনতি দেখছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বেশিরভাগই মনুষ্য সৃষ্ট। পানি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য উপাদান, আর আমরা একে দূষিত করেই চলছি। জনগণ সচেতন হলে আমরা এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারি। আমাদের উচিত ছিল জলাশয়গুলোকে বাঁচানোর উপায় খুঁজে বের করা।’

সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ডেপুটি হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম পানি সম্পর্কিত আলোচনার পাশাপাশি জলবায়ু ন্যায্যতার আন্দোলনে তরুণদের অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেন। তিনি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য যুব-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘দক্ষিণ এশীয় পানি ভাগাভাগি চুক্তিগুলোর অধিকাংশই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমন এটি দেখা যায় না।’

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশে পানির অভাব নেই, এই প্রচলিত ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’

সম্মেলনের শেষ দিনে আরও বক্তব্য রাখেন- একশনএইড ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান ডিরেক্টর রাজমি ফারুক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির প্রমুখ।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়