ঢাকা     সোমবার   ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৮ ১৪৩১

বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে, নিরাপত্তায় তিন শতাধিক ক্যামেরা

ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৫:১১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে, নিরাপত্তায় তিন শতাধিক ক্যামেরা

বইমেলা শুরু হচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি। চলছে স্টল তৈরির কাজ

অমর একুশে বইমেলায় এবার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে। মেলায় সব মিলিয়ে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের বইয়ের পসরা নিয়ে থাকছে। এছাড়া মেলার প্রবেশ ও প্রস্থানপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকায় তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বইমেলার আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমির সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।

তিনি জানান, ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবার। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতবছর বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ৬০১ প্রতিষ্ঠান। সেই হিসাবে এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি।

এবারের বইমেলা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন থাকবে।

গতবারের মত এবারও বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম-২’ সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ করবেন।

বইমেলার বিন্যাস

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার বইমেলায় গতবারের বিন্যাস অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার ‘বাহির’ পথ এবার একটু সরিয়ে কালী মন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে মোট আটটি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকবে।

খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে রাখা হয়েছে। এবার এমনভাবে খাবারের স্টলগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে যেন বইমেলায় আসা পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও থাকছে। গতবছরের মতই মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর, যাতে শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেলায় নিরাপত্তা

বইমেলার প্রবেশ ও প্রস্থানপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকায় তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত ধূলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

সময়সূচি

২০২৪ সাল লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। ফলে মেলার মাস ফেব্রুয়ারি পাবে ২৯ দিন। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। মেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।

পুরস্কার

অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

এ ছাড়া, ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

২০০৬ সালের পর এবার আবারও বাংলা একাডেমি এককভাবে বইমেলা আয়োজন করছে, এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে বিকাশ। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০০টি বই।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা

স্থান পরিবর্তন হবে না: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে আগামী বছর থেকে বইমেলা অন্য কোথাও করার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে।

জবাবে তিনি বলেন, বইমেলায় স্থান পরিবর্তন হবে না। বাংলা একাডেমির সঙ্গে সংযোগ রেখেই মেলা হবে। বাংলা একাডেমির দীর্ঘতম স্মৃতি হচ্ছে এই প্রাঙ্গনের মেলা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালে আমি সর্বোতভাবে চিন্তা করব এখানেই বইমেলা করার।

‘আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সবুজায়নের জন্য আমরা না পেলে সেটা দুয়েক বছরের জন্য হতে পারে। অনন্তকালের জন্য তো তা হবে না। যদি আগামী বছর ওখানে আমাদের বইমেলা করতে না দেওয়া হয়, তাহলে অন্য চিন্তা করতে হবে। আমাদের সামনে যে রাস্তা রয়েছে, ১৯৯৩-৯৪ সালে যেভাবে ব্লক করে দিয়েছিলাম, সেভাবে ব্লক করে রাস্তায় পরিমিতভাবে মেলার আয়োজন করতে হবে। তবে বাংলা একাডেমির সঙ্গে সংযোগ রেখেই মেলা হবে।’

নূরুল হুদা বলেন, অমর একুশে বইমেলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বইমেলা। শহিদদের স্মরণে ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নানা চড়াই-উৎরায়ের মধ্য দিয়ে মেলা আয়োজন হয়ে আসছে। এবারের বইমেলায় নতুন আঙ্গিকে শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের নতুন সংযোজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধনের পর যে পথ দিয়ে পরিভ্রমণ করবেন সেখানে ’৫২র ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্নভাবে  চিত্রিত করা থাকবে।

সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে জাকির তালুকদার কর্তৃক বাংলা একাডেমির আনিত অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার মূলত নির্বাহী পরিষদের  আলোচনাসাপেক্ষে  দেওয়া হয়। যেহেতু উনি অভিযোগপত্র দিয়ে পুরস্কারের টাকাটা ফেরত দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আলোচনাসাপেক্ষে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ সময় বাংলা একাডেমির সচিব মো. হাসান কবীর, জনসংযোগ-তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার, বইমেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর নহবত আলী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা কবি পিয়াস মজিদ।

হারুন/হাসান/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়