‘মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মাদকমুক্ত ও মানবিক সমাজ গড়তে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে অনন্য ভূমিকা রাখবে। 

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ৪র্থ ‘ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে উন্নত বিশ্বে খেলাধুলার ওপর অনেক গুরুত্ব আরোপ করা হয়।’ 

খেলাধুলা মানুষের মধ্যে ইতিবাচকভাবে প্রতিযোগিতামূলক চেতনা তৈরিতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে, এ কথা উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বোধ যে মানুষের মধ্যে কাজ করে, তারা দেশ ও সমাজকে উন্নত করতে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই, খেলাধুলার গুরুত্ব আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং জাতীয় জীবনে অপরিহার্য। খেলাধুলা শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা নয়, খেলাধুলার ফলে মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা মেয়র কাপের মাধ্যমে ঢাকার সন্তানেরা বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। 

মেয়র বলেন, ‘বিগত তিনটি আসর (ঢাকা মেয়র কাপ) উঠে আসা বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ইতোমধ্যে ফুটবল ও ক্রিকেটের বিভিন্ন পর্যায়ে জায়গা করে নিয়েছেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রমজান হাওলাদার বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলে, একই ওয়ার্ডের আকাশ যুব এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে অংশ নেয়। এছাড়া, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আগুন যাত্রাবাড়ীর ঝটিকা সংসদের প্রথম বিভাগে খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলেও ডাক পেয়েছে। অন্যদিকে, মেয়র কাপের ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে নিজেকে বিকশিত করেছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী অনিক। তিনি বর্তমানে ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএলে নিয়মিত খেলছেন। একই ওয়ার্ডের ইকবাল পারভেজ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েছেন। এভাবে ঢাকা মেয়র কাপ আন্তঃওয়ার্ড ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক খেলোয়াড় বর্তমানে বিভিন্ন ক্লাব ও বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন, যা এ প্রতিযোগিতার অন্যতম সাফল্য।’

ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় গৃহিত কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘আমি নির্বাচন ইশতেহারে বলেছিলাম, আমরা ক্রীড়াকে জাগ্রত করব। আমাদের সন্তানদেরকে আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠ উপহার দেবো। আমরা ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীবাজার খেলার মাঠ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বকশিবাজার খেলার মাঠ, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগঞ্জ খেলার মাঠ, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে চন্দনকোঠা খেলার মাঠ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিকাটুলি খেলার মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ উন্মুক্ত করেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় দুটি খেলার মাঠ—৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাপবাগ খেলার মাঠ আর ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ধুপখোলা আন্তর্জাতিক খেলার মাঠ ইতোমধ্যে আমরা ঢাকাবাসীকে উপহার দিতে পেরেছি। এছাড়াও দুই নম্বর ওয়ার্ডে গোড়ান খেলার মাঠ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবো খেলার মাঠ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মুক্তাঙ্গন খেলার মাঠ, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডগাইর খেলার মাঠ, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে মেন্দিপুর খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। আরও ১০টি খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠায় আমরা জমি শনাক্ত করেছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-৪ আসনের আওলাদ হোসেন ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জিন্নাতুল বাকীয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

 উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ১৯ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ফুটবলের উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হয়। ঢাদসিক আয়োজিত ৪র্থ ঢাকা মেয়র কাপে ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন প্রতিটি ক্যাটাগরিতে ৬৪টি করে দল অংশ নিচ্ছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি গোলাপবাগ মাঠে ২৫ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ক্রিকেটের উদ্বোধনী ম্যাচ হবে। বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনে ৩১ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ব্যাডমিন্টন খেলার উদ্বোধনী ম্যাচ হবে। পুরো প্রতিযোগিতা হবে নক-আউট পদ্ধতিতে। ফুটবল ও ক্রিকেটে বিজয়ী প্রতিটি দলই ৭ লাখ টাকা করে এবং রানার-আপ দল ৫ লাখ টাকা করে পাবে। ব্যাডমিন্টনে বিজয়ী দল ৩ লাখ এবং রানার-আপ দল ২ লাখ টাকা পাবে। 

প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মধুমতি ব্যাংক এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওরিয়ন গ্রুপ, এমজিআই ও লাবিব গ্রুপ এবারের আয়োজনে সহযোগিতা করছে। 

এবারের আয়োজনে গোলাপবাগ মাঠ, বুয়েট কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল খেলার মাঠে ক্রিকেটের সব ম্যাচ এবং শেখ জামাল স্পোর্টস একাডেমি, আউটার স্টেডিয়াম, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি খেলার মাঠ ও ধুপখোলা আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার মাঠে ফুটবলের সব ম্যাচ হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনে ব্যাডমিন্টনের সব ম্যাচ হবে।

এছাড়াও বকশি বাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ফজলে রাব্বি হল খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বাসাবো খেলার মাঠ, ওরিয়েন্ট ক্লাব খেলার মাঠ এবং সামসাবাদ খেলার মাঠে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ফুটবল ও ক্রিকেটের অনুশীলন করবে।

আগামী ৯ মার্চে বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৪র্থ ঢাকা মেয়র কাপের পর্দা নামবে।