ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি সামিট অনুষ্ঠিত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ৫ মার্চ ২০২৪  
বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি সামিট অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণফোন নিবেদিত বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি সামিট, ২০২৪।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, দেশের সাইবার নিরাপত্তায় বিদেশ থেকে ভাড়া করা প্রযুক্তি বা সহায়তা নিলে হবে না, আমাদের নিজস্ব শক্তি গড়ে তুলতে হবে। কোনো দেশ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ভাড়া করা সামরিক শক্তি দিয়ে করতে চায় না, তেমনই বাংলাদেশ সাইবার নিরাপত্তা বা সুরক্ষায় ভাড়া করা কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করবে না। দেশের ব্যাংকিং, টেলিকম এবং পাওয়ার সেক্টরে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে বিদেশনির্ভর হওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, আমরা নিজস্ব সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট এবং প্রযুক্তির নতুন টুল তৈরিতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্র দাবি করতে পারবে না তারা শতভাগ সাইবার নিরাপদ। তবে, আমরা সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সচেতনতা বাড়াতে অনেকটাই এগিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য-উপাত্ত চুরি করার জন্য বড় ধরনের আক্রমণ হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে অর্থের পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত মূল্যবান হয়ে উঠছে। এখন আমাদের তথ্য-উপাত্ত সুরক্ষায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যে কারণে আমরা পার্সোনাল ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট প্রণয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

প্রতিমন্ত্রী তার বক্তৃতায় সাইবার সুরক্ষায় নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সমন্বয়—এ চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। 

সাইবার জগৎকে নিরাপদ রাখতে এবং সাইবার হামলা মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান জুনাইদ আহমেদ পলক।  

আন্তর্জাতিক সমন্বয় বেশি প্রয়োজন, উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাইবার হামলার স্বীকার হয়েছিল, সেবার কিন্তু একটা দেশ থেকে সাইবার অপরাধীরা আক্রমণ করেনি। বাংলাদেশ থেকে অর্থ চুরি করে অন্য একটা দেশে নিয়ে যায়। এ ধরনের আর কোনো বড় ক্ষতির সম্মুখীন যাতে না হতে হয়, সেজন্য প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠানকে আমরা গাইডলাইন দিয়েছি এবং তাদের প্রযুক্তিগত কি সক্ষমতা প্রয়োজন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এছাড়া, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা করছি। পাশাপাশি ভারত, আমেরিকা, জাপান ও কোরিয়ার সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি, যাতে কোনো ধরনের সাইবার নিরাপত্তার হুমকি বা ঝুঁকির তথ্য-উপাত্ত তারা পেলে আমাদের সাথে শেয়ার করে, আমরা পেলে তাদের সাথে শেয়ার করি। আমরা আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠনের সদস্যপথ গ্রহণ করেছি। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতটুকু সমৃদ্ধ হবো, স্মার্ট বাংলাদেশের যত ডিজিটাল সার্ভিস জনগণকে দেবো, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যত ক্যাশলেস হবে, তত বেশি আমাদের সাইবার ঝুঁকিও বাড়তে থাকবে।

তিনি বলেন, এ সাইবার সামিটের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট, তাদের কাছ থেকে বর্তমানের ঝুঁকিগুলো বোঝা, ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সরকারি-বেসরকারি খাত ও শিক্ষাঙ্গনে তাদের মধ্যে একটা সহযোগিতা করা হবে। ভবিষ্যতে সচেতনতা বৃদ্ধি বা বিদেশি প্রযুক্তি শুধু বাংলাদেশে আনাই নয়, আগামীতে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে স্টার্টআপদের যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে, সেটা তৈরি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ সাইবার সামিট আয়োজন করা হবে। আগামী বছর থেকে আমাদের স্থানীয় সাইবার সিকিউরিটি স্টার্ট-আপ, ইনোভেটর এবং লোকাল যে প্রযুক্তিগুলোর ডেভেলপ করার সুযোগ আছে, সেখানে সরকার ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়াকে সহযোগিতার মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং স্বনির্ভরতা অর্জন করতে চাই।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান, স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের কো-চেয়ারম্যান, সাবেক মুখ্য সচিব, সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক হুসাইন এ সামাদ, টেকনো হ্যাভেন কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সিইও হাবিবুল্লাহ এন করিম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চিফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অফিসার ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান।

লিঙ্ক৩ টেকনোলজিস লিমিটেড এবং আইডিয়া ফাউন্ডেশনের সঞ্চালনায়, বিকাশ লিমিটেডের সম্পৃক্ততায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় আয়োজিত এ সামিটের আয়োজক হিসেবে ছিল বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম। দিনব্যাপী সামিটে উপস্থিত ছিলেন দেশের ব্যবসায়, উন্নয়ন, প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স খাতের দেশের শীর্ষ সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ পলিসি বিশেষজ্ঞ এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আগ্রহী দেশ-বিদেশের আরও অনেকে।

সামিট সাজানো হয়েছে মূলত ‘সাইবার রেজিলিয়েন্স ফর বাংলাদেশ’ রূপকল্প মাথায় রেখে। আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য—বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন সমস্যা এবং সুযোগগুলো অন্বেষণ করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করছে, এমন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, শিল্প, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে সহযোগিতা এবং গঠনমূলক সংলাপ করার একটি প্ল্যাটফর্ম দেওয়া।

হাসান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়