ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

সংসদে বিল পাস

স্থায়ী রূপ নিলো দ্রুত বিচার আইন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১২, ৫ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ২০:২৪, ৫ মার্চ ২০২৪
স্থায়ী রূপ নিলো দ্রুত বিচার আইন

ফাইল ফটো

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল-২০২৪’ পাস করা হয়েছে। এতদিন বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ বাড়িয়ে আইনটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তবে, তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলটি পাসের বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তারা সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে এই আইনের মাধ্যমে দমন-পীড়নের শিকার হবেন। তবে, তাদের সেই আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল। 

আরো পড়ুন:

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতি, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি; দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে বাধা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে ‘আইন- শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২’ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে সাত বার এর মেয়াদ বাড়ানো হয়, যে মেয়াদ আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এই আইনটি স্থায়ী করা প্রয়োজন।

বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আইনটি ২০০২ সালে বিএনপি সরাকরের সময় যখন করা হয়, তখন আপনারা বলেছিলেন, এটা নিবর্তনমুলক আইন, কালো আইন। এই আইনে রাজনৈতিক কারণে বা যেকোনো কারণে সরকার ইচ্ছা করলে যেকোনো নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সেই আইনটা আপনারা রেখেছেন, আমি জানি না কেন রেখেছেন? আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো হলেও স্থায়ীভাবে আইনটি করার পর অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসলে তাদের উদ্দেশ্য তো ভালো নাও থাকতে পারে। তখন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানির শিকার হতে হবে।

জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে পড়তে হয়। বিএনপি গর্ত খুঁড়েছিল, গর্তে পড়তে হয়েছে। আজ আপনারা আইনটি স্থায়ী করছেন, সময় তো সব সময় একরকম যায় না। তাই, স্থায়ী না করে আইনটির মেয়াদ চার বা পাঁচ বছর বাড়াতে পারেন।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যখন ২০০২ সালে আইনটি হয়েছিল, তখন সবাই বিরোধিতা করেছি। এই ২২ বছরে মানুষের অবস্থা কী হয়েছে, সেটা জনমত যাচাই করে দেখতে পারেন। যেহেতু সময় শেষ, তাই চার বছর বাড়াতে পারেন।  

এসব কথার জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ২০০২ সালে এই আইনটি করা হয়েছিল। আমি মনে করি, এই আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিল, যাতে তাৎক্ষণিক বিচার হয়। যারা অপরাধ করে, অল্প সময়ের মধ্যে যেন তাদের বিচার হয়। সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান, এই আইনটির মাধ্যমে যেন বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না, অনেকেই প্রায়ই এই আইনটি ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ পাঠান, যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। আইনটির উদ্দেশ্যটা ছিল সেটাই। সংসদ সদস্যরা কেউ বলেননি, এই আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়। শুধু বলেছেন, সময় বাড়িয়ে দিয়ে আইনটি চালু থাকুক। কিন্তু, আমরা মনে করি, বার বার সময় না বাড়িয়ে এটাকে স্থায়ী করলে সবার জন্যই মঙ্গল হবে। তবে, আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই, এটার কোনো অপপ্রয়োগ হবে না। এটা ভালো আইন। তাদের মেনে নিতে আমি অনুরোধ রাখব।

এএএম/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়