ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড

‘বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৬ মার্চ ২০২৪  
‘বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই’

রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী ইজাজ উদ্দিন আশিক। তিনি বলেছেন, এখনও সেই রাতের ভয়াবহতার কথা মনে পড়লে ঘুমাতে পারি না। আটকে পড়া মানুষের চিৎকার, শিশুদের কান্নার শব্দ এখনও কানে ভেসে আসে। মানসিকভাবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সে দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে ওই ভবনের চার তলায় খানা’স রেস্টুরেন্টে যাই। খাবার অর্ডার করে এসে কথা বলছিলাম। হুট করে শুনতে পাই, রেস্টুরেন্টের নিচতলায় আগুন লেগেছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে যাওয়ার কথা ভাবতেই নিচের ফ্লোর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। ফলে, ছাদের দিকে উঠতে শুরু করি। ভবনে একটি মাত্র সিঁড়ি। তখন বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই। এর পর পড়ে থাকা মানুষদের ওপর দিয়েই কোনোরকমে দৌঁড়ে এবং একপর্যায়ে হামাগুড়ি দিয়ে ছাদে পৌঁছাই। ছাদে গিয়ে দেখি, আগুন অনেক কাছে চলে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘ছাদে রেস্টুরেন্ট ছাড়াও কর্মীদের থাকার ঘর ছিল। আগুন যাতে সেখানে দ্রুত আসতে না পারে, তাই আমরা সেই ঘরে থাকা তোষক-বালিশসহ অন্যান্য জিনিস যেগুলোতে দ্রুত আগুন লাগতে পারে, সেগুলো ছাদ থেকে নিচে ফেলি। তখন আমিও লাফ দেওয়ার চিন্তা করি, কিন্তু সাহস হয়নি। এর মধ্যে বাসার সবার সাথে কথা বলে ফেলেছি। তখন সিদ্ধান্ত নিই, মরতেই যখন হবে, সিজদায় পড়ে যাই। আল্লাহু আকবর বলতে থাকি, আজান দিই। এ সময় পাশের ভবন থেকে ফায়ার সার্ভিস সিঁড়ি ঘরের আগুনে পানি ছিটাতে শুরু করে। তখন মনে হলো, আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন। আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম।

‘আমি যখন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলাম তখন আটকে পড়া মানুষের চিৎকার, শিশুদের কান্না শুনি, সেসব ভোলার মতো না। যারা আমাদের উদ্ধার করতে সহায়তা করেছেন, সক্রিয় অংশ নিয়েছেন, সবার জন্য দোয়া করি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একপর্যায়ে ছাদের এবং সিঁড়ি ঘরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এর পর প্রথমে ছাদে অবস্থান নেওয়া নারী ও শিশু এবং পরে আমাদের উদ্ধার করে।

প্রসঙ্গত, ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছেন। মৃতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী এবং আট জন শিশু।

রায়হান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়