সরকার কোস্টগার্ডকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে: প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি
সমুদ্র সম্পদের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে, সমুদ্রনির্ভর অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখতে এবং সুনীল অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য সরকার কোস্টগার্ডকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১০ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশের মানুষের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেন এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনিই প্রথম যখন ৬ দফা দিয়েছিলেন এই বাংলাদেশে যেন নৌঘাটি হয় সেই দাবি করেছিলেন। স্বাধীনতার পর আমাদের সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলেন।
তিনি বলেন, সমুদ্রসীমায় অধিকারের আইন জাতিসংঘ করেছিলো ১৯৮২ সালে, আর জাতির পিতা করেছিলেন ১৯৭৪ সালে। এটা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত ছিলো। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই এই ধরনের আইন প্রথম প্রণয়ন করে।
‘এই আইনের আওতায় মিয়ানমারের সাথে কিছু সমঝোতাও করে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টে জাতির পিতাকে পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলো জিয়ার সরকার, এরশাদ সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকার কেউ-ই কিন্তু সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে, এই ব্যাপারে নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই্ মনে হচ্ছে যে এই বিষয়ে জানেই না। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এই উদ্যোগ নিই। আমিই জাতিসংঘে সই করি।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৮ সেই সময়টা প্রকৃতপক্ষে কেউ কোনো উদ্যাগ নেয়নি। পরবর্তীতে আমরা আবারও ক্ষমতায় এসে আমাদের সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এই বিশাল সমুদ্রসীমায় আমাদের যে সম্পদ তা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমরা ইতিমধ্যে ব্লু ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা যে সমুদ্রসীমা অর্জন করতে পেরেছি এটাও বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত। পার্শবর্তী দুই দেশ ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমরা সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ১৯৯৫ সালে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ২৯ বছরে আজ একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের আনীত বিলের কারণেই ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড’ একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার কোস্টগার্ড এর বিভিন্ন জোনের জন্য ভূমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং নতুন নতুন জলযান সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড-এর অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখে।
‘এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ হতে ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্ট গার্ড এর স্টেশন ও আউটপোস্টসমূহে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন আকারের জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ড-এর জোনসমূহে কর্মরত সদস্যদের বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি সমুদ্রনির্ভর পেশায় নিয়োজিত জনসাধারণের ও নৌপথের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড-এর গভীর সমুদ্রে টহল উপযোগী আরও ৪টি ওপিভি, ২টি মেরিটাইম ভার্সন হেলিকপ্টার সংগ্রহের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই এ বাহিনীতে যুক্ত হতে যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, মেরিটাইম সার্ভাইল্যান্স সিস্টেম, হোভারক্র্যাফট ও দ্রুতগতিসম্পন্ন বোট।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২টি হেলিকপ্টার ক্রয়সহ অ্যাভিয়েশন উইং গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করেছি যা সংযোজনের মাধ্যমে কোস্টগার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এসব জাহাজের সংযোজন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ বাহিনী অধিকতর সক্ষমতা অর্জন করবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এছাড়া সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর আধুনিকায়নে রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী বর্তমান জনবল হতে বৃদ্ধি করে ১৫,০০০ জনবল অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দৃষ্টিও এখন দেশের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে নিবদ্ধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সমুদ্রপথে আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে এবং সুনীল অর্থনীতির বিশাল ভান্ডার মজুত রয়েছে এই বঙ্গোপসাগরে। এই সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সেজন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাছাড়া, এক্ষেত্রে আমাদের পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ রয়েছে কাজ করার।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সমুদ্র বন্দরসমূহের নিরাপত্তা প্রদান, মাদক পাচার, অস্ত্র চোরাচালান, মানব-পাচার, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার, সমুদ্র ও নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ, জলদস্যুতা ও বনদস্যুতা দমনের মতো কার্যক্রমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া এ বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন: ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যায় দেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে জনগণের প্রকৃত বন্ধু এবং আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
/পারভেজ/সাইফ/