ঢাকা     সোমবার   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

ঈদযাত্রার শেষ মুহূর্তে বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ১০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৪:৩১, ১০ এপ্রিল ২০২৪
ঈদযাত্রার শেষ মুহূর্তে বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়

রাজধানীর এক বাস কাউন্টারে ঘরমুখো মানুষের ভিড়

রাত পোহালেই ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে শেষ মুহূর্তেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া, বাসগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ছে না বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

বুধাবার (১০ এপ্রিল) ভোর থেকেই রাজধানীর সায়েদাবাদ- ধোলাইপাড়-যাত্রবাড়ীর বাস কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, বাস কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে স্বাভাবিকের থেকে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে। ঘরমুখো মানুষের চাপ দেখে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিচ্ছেন।

যাত্রীরা বলছেন, ঈদে বাড়ি ফেরার তাড়া, এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে পরিবহনগুলো। অন্যদিকে, বাস কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ঈদের সময় সামান্য বোনাস নেওয়া হচ্ছে।

সায়েদাবাদে বেলা ১১টার দিকে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান বিএম লাইন পরিহনের সুপারভাইজার ও যাত্রীরা। ঢাকা থেকে বরিশালের ভাড়া ৩৫০ টাকা হলেও দাবি করা হচ্ছে ৬৫০ টাকা। 

সুপারভাইজার মো. জসিম বলেন, একদাম ৬৫০ টাকা। ভালো লাগলে যান, না লাগলে অন্য বাসে যান। আমাদের পরিবার আছে। তাদের নিয়ে ঈদ করতে হবে। সারা বছর বাড়তি ভাড়া নিই না । ঈদের সময় নিই। বাসের মালিক আমাদের ঈদের খরচ দেবে না, যাত্রীদের কাছ থেকেই নিতে হবে।  

বরিশালের যাত্রী কামরুজজামান বলেন, আমি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করি। চাকরির বয়স ছয় মাস থেকে ১৫ দিন কম হওয়ায় বোনাস পাইনি। বোনাস না পাওয়া যে  কতটা কষ্টের, তা বলে বোঝানো যাবে না। এরপরও বাড়ি যাচ্ছি। বৃদ্ধ বাবা-মা বাড়িতে থাকেন, তাদের সাথে ঈদ করার জন্য যাচ্ছি। পরিবহন শ্রমিকদের কোনো বিবেক নেই। ৪০০ টাকার ভাড়া ৪৫০ বা ৫০০ টাকা নিতে পারে, তাই বলে ৬৫০ টাকা নেবে! দিনে-দুপুরে এরা গলা কাটছে, দেখার কেউ নেই। আমরা অসহায় ওদের কাছে। বাধ্য হয়ে ৬৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।

কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পিকআপ চালক মো. আব্দুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি সব সময় ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ফরিদপুরে বাড়ি যাই। এখন ভাড়া হাঁকাচ্ছে ৬০০ টাকা। অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে ঘিরে ধরে চুপ থাকতে বলছে। ভাড়া নিয়ে কথা বললে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। কাউন্টারে অভিযোগ করলাম। তারা বললো, কী আর করবেন? ঈদের সময় একটু বোনাস দিয়ে বাড়ি যান।  

কেএফ লাইন পরিবহনের সুপারভাইজার আরিফ হোসেন বলেন, আমরা সারা বছর গাড়িতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমে যাত্রী নিই। ঈদের সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিই। অন্য সময়ের চেয়ে ঈদে ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হন। তাদের বুঝিয়ে আমরা নিয়ে যাই। কিন্তু, এটা আবার অনেকে মানতে রাজি না।

পটুয়াখালীগামী যাত্রী রায়হান হোসেন বলেন, আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় নিয়মিত যাই। অথচ এখন ভাড়া চাচ্ছে ১ হাজার টাকা। দেশে এটা কী চলছে? অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  

কথা হয় ঢাকা থেকে পিরোজপুর রুটে চলাচলকারী দোলা পরিবহনের বাসের যাত্রী সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৬০০ টাকার ভাড়া ৯৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। কী আর করব, বাড়ি তো যেতেই হবে।

সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আজ ভোর থেকে যাত্রীর চাপ। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছে বাস কোম্পানিগুলো। যাত্রীদের কারো কোন অভিযোগ থাকলে কন্ট্রোল রুমে করতে পারে। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সায়েদাবাদে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুমের উপ-পরিদর্শক মো. যোবায়ের বলেন, ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আমাদের কাছে কেউ অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি দেখব।

এএএম/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়