‘বঙ্গবন্ধু আজীবন পৃথিবীর সব শোষিত মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পৃথিবীর সব শোষিত মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বুধবার (১ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
পহেলা মে আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, আজকের এই দিনে আমরা পৃথিবীর সব মেহনতি মানুষদের অভিনন্দন ও তাদের সাথে সংহতি জানাই। আগে শ্রমজীবী মানুষকে যেখানে প্রতিদিনই কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো, কাজের অনুপাতে পারিশ্রমিক ছিল যেখানে অত্যন্ত নগণ্য; সে অবস্থায় সন্তানদেরসহ মানবেতর জীবন-যাপন ছাড়া তাদের আর কোনো পথ ছিল না। ১৮৮৪ সালে শ্রমজীবী মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বিরাট সমাবেশ করে মালিকপক্ষকে কাজের সময় কমিয়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টা করা ও সাপ্তাহিক ১ দিন ছুটি দেওয়ার দাবি করে। কিন্তু মালিক বা সরকার কেউ এ দাবি মেনে নেয়নি। শ্রমজীবীরাও মরণপণ আন্দোলন শুরু করে। ১৮৮৬ সালের মে মাসে শিকাগোর হে মার্কেট এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরাট সমাবেশে পুলিশ গুলি করে। পরপর কয়েকদিন ধরে শ্রমিকদের মিছিলে পুলিশ বারবার গুলিবর্ষণ করে। আন্দোলন করার ‘অপরাধে’ ৬ জন শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। কয়েকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। দুঃখে-অপমানে-অত্যাচারে একজন নেতা জেলের ভেতর আত্মহত্যা করেন। এভাবে অত্যন্ত নৃশংসভাবে শ্রমজীবীদের এই আন্দোলনকে দমন করা হয়।
তারা বলেন, কিন্তু এই যৌক্তিক মানবিক আন্দোলন কালক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই দাবি সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কমন দাবিতে পরিণত হয়। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসী বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি উৎসবে শ্রমজীবী মানুষেরা শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মৃতিতে বিশ্ববাসীর কাছে ১৮৯০ সালের ১ মে থেকে এই দিনটিকে ‘মে ডে’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করে। ১৮৯১ সালে এই প্রস্তাবটি আন্তর্জাতিক রূপ পায় এবং এরপর থেকে দিনটি সারা বিশ্বের মেহনতি মানুষের কাছে সংগ্রামের, কৃতজ্ঞতার ও শ্রদ্ধার একটি পবিত্র দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে।
‘শিকাগো ও পরবর্তীকালের সেই আন্দোলনের কারণেই আজ আমরা অশিক্ষিত ও শিক্ষিত শ্রমিক (যাদের বলে ‘‘ব্লু কলার’’ ও ‘‘হোয়াইট কলার’’ ওয়ার্কার) নির্বিশেষে সবাই দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করার ও একদিন সাপ্তাহিক ছুটির অধিকার পেয়েছি; মেহনতি মানুষকে ‘‘মানুষ’’ বলে গণ্য করার ‘‘নিয়ম’’ পেয়েছি।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯২৩ সাল থেকে ভারতবর্ষে এই দিনটি পালিত হয়। বাংলাদেশেও এই দিনটি দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয় আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পৃথিবীর সব শোষিত মানুষের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালেই জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও’র সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধু সরকার শ্রমজীবীদের স্বার্থরক্ষায় এই সংস্থার ৬টি ভিত্তি নীতিমালার এবং ২৯টি সনদের সবগুলোতে স্বাক্ষর করে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ শ্রমজীবীদের অধিকার বিষয়ক এই সনদগুলোতে স্বাক্ষর করেছে।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ