‘গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে গণমাধ্যমের সমস্যার সমাধান হবে’
সরকার গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, এ মুহূর্তে আমি গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে কাজ করছি। আইনটি পাস হলে এটি মোটামুটি সবকিছু কাভার করে ফেলবে। কারণ এখানে অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক সবকিছুই আছে। গণমাধ্যমের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) প্রকাশনা ‘বিএসআরএফ বার্তা’র মোড়ক উন্মোচন ও বিএসআরএফ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)-এর সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইনের অধীনে যত সুরক্ষা দেওয়া আছে সেগুলোকে রেখে বাকি বিষয়গুলো গণমাধ্যমকর্মী আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার কাজ করা হচ্ছে। সরকার গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা চায় বলে আমাদের আমলে গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে। যদি না চাইতো তাহলে এত গণমাধ্যম বের হতো না। সরকার নিজেই চায় সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া হোক। তাহলে সরকারেরই লাভ। কিন্তু এই অবাধ স্বাধীনতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যদি অপসাংবাদিকতা হয় তাহলে শুধু সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং গণমাধ্যম ও প্রকৃত সাংবাদিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মানবাধিকারের কথা বলে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিডব্লিইউ যে উৎস ব্যবহার করে নিউজ করেছে তাতে আমি হতবাক হয়েছি। আমি তাদের বলবো, গাজায় যেভাবে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চলছে সেটার একটা ডকুমেন্টারি করেন, দেখি। যদি করেন তাহলে বুঝবো আপনারা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারেন।
সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে এ মুহূর্তে আমি বলতে পারব না, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি এখন গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে কাজ করছি। সব সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। তাদের মতামত নিচ্ছি।
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) পত্রিকার সার্কুলেশন সংখ্যা বিভ্রান্তি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ইতোমধ্যে কাজ করছি। বিষয়টি একটু জটিল। জটিল এই কারণে যে, সংখ্যা নির্ণয় করার যে ফর্মুলাটা আছে, তার মধ্যেও কিছু গলদ আছে। সেটিকেও ম্যানুপুলেট করা যায়। যদি বলি ফর্মুলা অলরেডি আছে, সেটি দিয়ে সঠিক তালিকা করে ফেলব, এর মধ্যেও দেখা যাবে সঠিক হয়তো অনেক কিছু হবে না। কারণ পেছন দিকে ম্যানুপুলেশন সমস্যা। যে কারণে আমি ফর্মুলাটা নিয়ে কাজ করছি।
‘মন্ত্রণালয় থেকে ক্রোড়পত্র দিই, তা কিন্তু ডিএফপির লিস্ট দেখে দিচ্ছি না। আমি কিন্তু একটি লিস্ট বানিয়েছি, বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে। যেটি আমাকে মোটামুটি সঠিক একটি সার্কুলেশনের চিত্র দিয়েছে। তার ভিত্তিতে আমি এখন সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি। কারা কত ক্রোড়পত্র পেয়েছে, তা এক্সেল সিটের মাধ্যমে মেইন্টেইন করি। কাছাকাছি সার্কুলেশনের দুটি পত্রিকার মধ্যে একটি পত্রিকা কম পেলে পরে তা ব্যালেন্স করার চেষ্টা করি। আমি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি’- জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৬০-৭০ শতাংশ সিদ্ধান্ত সার্কুলেশনের ওপর ভিত্তি করে নিই। কারণ এখানে সরকারের স্বার্থ আছে। বেশির ভাগ মানুষের হাতে এটি আমি পৌঁছাতে চাই। কিছু পত্রিকা আছে সার্কুলেশনের চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু তার একটি ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে, কিছু পত্রিকা আছে সার্কুলেশনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও সেখানে নামকরা সম্পাদক আছেন, যার নিজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ব্র্যান্ডিং আছে, এগুলোকে যাচাই-বাছাই করে ব্যালেন্স করে ক্রোড়পত্র দিয়েছি, কোনও ব্যক্তির সুপারিশে ক্রোড়পত্র দিইনি। সুপারিশ করেছে নিয়েছি দেখেছি। কিন্তু দিনশেষে আমার যে ফর্মুলা সেটি অ্যাপ্লাই করেছি।
ডিএফপিতে নতুন ডিজি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, যারা সার্কুলেশনের কাজ করে তাদের নিয়ে আমি বসব। ফর্মুলাকে একটি ফাইন টিউন করে একটি ফর্মুলা আনার যে সত্যিকার অর্থে সার্কুলেট, অর্থাৎ শুধু প্রিন্ট করলে হবে না; বিক্রিত নম্বরটা আমরা পাওয়ার ফর্মুলা বের করব, যেখানে ম্যানুপুলেশনের সুযোগ থাকবে না। আমার কাছে আসল লিস্টটা যাতে থাকে। সব জায়গায় আমি এক ধরনের স্বচ্ছতা ও অবজেকটিভিটি আনার চেষ্টা করছি। আপনারা সবার সামনে যে বিষয়টি বলবেন, আমাকে একা পেলেও সেই কথাটিই বলবেন।
বিটিভির দিকে নজর দেওয়া প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিটিভিসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৫টি ডিপার্টমেন্টের দিকেই তাকাব। সবগুলোর ভেতরে ঢুকব। শুধু ভেতরেই ঢুকব না একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যাব। ভেতর থেকে আমার সাধ্যের মধ্যে, সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংস্কার করার সুযোগ আছে সবগুলোই করব। তবে এটিকে আমি প্রায়োরিটি বেসিসে করব। সব জায়গায় কিছু না কিছু পরিবর্তন আপনারা দেখতে পাবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রকাশনা কমিটির সভাপতি ও বিএসআরএফ’র সহ সভাপতি এম এ জলিল মুন্না (মুন্না রায়হান), বিএসআরএফ’র প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিমসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ