ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২১ ১৪৩১

হলফনামা খ‌তি‌য়ে দেখার আহ্বান টিআইবির

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: অনির্বাচিতদের তুলনায় নির্বা‌চিত‌দের আয় বেশি ১০ গুণ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২০, ২৭ মে ২০২৪   আপডেট: ১৮:২০, ২৭ মে ২০২৪
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: অনির্বাচিতদের তুলনায় নির্বা‌চিত‌দের আয় বেশি ১০ গুণ

গত পাঁচ বছরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচিত হননি এমন প্রার্থীদের তুলনা করলে দেখা যায়, যেসব জনপ্রতিনিধি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন, তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা কখনও কখনও অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে সংসদ সদস‌্যদেরও পেছ‌নে ফে‌লে‌ছেন। গত ১০ বছরের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির তুলনা করলে অনির্বাচিতদের তুলনায় আয় ১০ গুণ ও অস্থাবর সম্পদ প্রায় ৩৭ গুণ বেশি বেড়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। অর্থাৎ, ক্ষমতায় থাকার সাথে দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট। দশ বছরের হিসাব তুলনা করলে দেখা যায়, পদে থাকা প্রার্থীদের আয় ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে যথাক্রমে ৬৮১.৩৭ ও ১০১০.১২ শতাংশ। পদে না থাকাদের এক্ষেত্রে আয় ও সম্পদ বেড়েছে যথাক্রমে ৭১.৭১ ও ৩১.৩৫ শতাংশ।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ (৩য় ধাপ) এর প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ‌্যই উঠে এসেছে।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ উপলক্ষে সোমবার (২৭ মে) ধানম‌ন্ডিস্থ কার্যাল‌য়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সহ-সমন্বয়ক রিফাত রহমান।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ বছরে একজন চেয়ারম্যানের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৮৮৯.৬৮ শতাংশ, ৫ বছরে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ১০৪২২.০৪ শতাংশ। ১০ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৮৭৯৩ শতাংশ, ৫ বছরে স্ত্রী/স্বামী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৫৪০০ শতাংশ। ৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৩০৬৫, যেখানে একজন চেয়ারম্যানের বেড়েছে ৯৮৫০ শতাংশের বেশি।

হলফনামায় প্রদর্শিত প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ সম্পূর্ণ কি-না এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না কিংবা কর ফাঁকির মতো ঘটনা ঘটেছে কি-না তা স্বপ্রণোদিতভাবে খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

এ সময় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ও গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা দলের সদস্য ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সহ-সমন্বয়ক ইকরামুল হক ইভান ও কে. এম. রফিকুল আলম।

চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১১১টি উপজেলার প্রায় চার হাজার হলফনামায় দেওয়া আটটি তথ্যের বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ, সার্বিক চিত্র, উপজেলাভিত্তিক তুলনা টিআইবির ওয়েবসাইটে ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ ড্যাশবোর্ডে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, সার্বিকভাবে প্রার্থীদের প্রায় ৩৭ শতাংশ আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে, অর্থাৎ করযোগ্য আয় নেই তাদের। সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় দেখিয়েছেন ১০.৫ শতাংশ প্রার্থী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ২৪.২১ শতাংশের আয় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ওপরে। অন্যান্য প্রার্থীর ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ৩.৪৫ শতাংশ। আবার, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ১৯.৫ শতাংশের আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে, অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৪৫.৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ, চেয়ারম্যান পদে অপেক্ষাকৃত ধনীরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাছাড়া, সার্বিকভাবে তৃতীয় ধাপের প্রার্থীদের মধ্যে ১০৬ জনের ১ কোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ রয়েছে। কোটিপতির সংখ্যা আগের নির্বাচনের তুলনায় হয়েছে প্রায় ৪ গুণ।

অস্বাভাবিক হারে আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আয় কিংবা সম্পদ বৃদ্ধি সকলের জন্যই প্রত্যাশিত, তবে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করলে তা তো প্রশ্নবিদ্ধ হবেই। প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রার্থী হলফনামায় উল্লেখ করেছে তাদের করযোগ্য আয় নেই, যা অবিশ্বাস্য। অন্যদিকে, অনেকেই আয় উল্লেখ করলেও সূত্র উল্লেখ করেননি। অর্থাৎ তারা নিজেরাই বলে দিচ্ছেন যে তাদের আয় বৈধ নয়।

টিআইবি প্রণীত নির্বাচনি হলফনামার ড্যাশবোর্ড সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভাণ্ডার। যেমন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যদি যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে তাহলে এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিশাল কর ফাঁকির ঘটনা খুঁজে বের করা সম্ভব। তাছাড়া, প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদর্শিত আয় ও সম্পদ সম্পূর্ণ কি-না এবং বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না তা স্বপ্রণোদিতভাবে খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের। যদিও সে দায়িত্ব পালনে এ সকল সংস্থাসমূহের ন্যূনতম আগ্রহ দেখা যায় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে আমাদের বিশ্লেষণের তথ্যসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই।

নঈমুদ্দীন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়