ঢাকা     শনিবার   ২৯ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

‘দ্রুত নগরায়ন এবং নৈতিকতার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে ঢাকা’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১ জুন ২০২৪  
‘দ্রুত নগরায়ন এবং নৈতিকতার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে ঢাকা’

‘দ্রুত নগরায়ন এবং নৈতিকতার অভাবজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি জেলা শহর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সমস্যাগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।’

শনিবার (১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অন আরবান আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী। 

বক্তাদের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে সরকার দুর্যোগ-ঝুঁকি এড়াতে কাজ করছে। ভবনের তদারকির সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম চাপিয়ে না দিয়ে জনগণকে ভূমিকম্প/ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকায় দ্রুত নগরায়ন এবং অভিবাসনের ফলে ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন নীতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যামান দুর্বলতাকে কাটিয়ে একটি স্থায়ী ও ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ে তোলা যেতে পারে।

মন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বড় কোনো ভূমিকম্পের অনুপস্থিতির কারণে শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এবং এই ধরনের ঘটনার প্রভাব প্রশমিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কৌশলসমূহের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনের ঘাটতি রয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের আরও সমন্বিত পদ্ধতি প্রণয়ন প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে, বিশেষ করে শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত কোনো জাতীয় নীতি নেই। ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ শহর নির্মাণে এ ধরনের একটি সমন্বিত জাতীয় নীতি প্রণয়ন আবশ্যক। 

সেমিনারের গেস্ট অব অনার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানের দূরদর্শী পরিকল্পনাই ভবিষ্যতের ঢাকাকে গড়ে তুলবে। ১২৫ বছর ধরে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সহসাই একটি বড় ভূমিকম্প হতে পারে। তাই, এ বিষয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে সরকার। যত দ্রুত সম্ভব এ কাজটি করতে হবে।

সেমিনারে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারিগরি ও দক্ষ জনবল এবং সংগৃহীত আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ল্যাবরেটরি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ থেকে দেশের সম্পদ ও জনগণের জান-মালের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে বিপুল সামর্থ সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ, প্রয়োগ ও  পরিচালনা করা প্রয়োজন। উল্লিখিত সামর্থ টেকসইভাবে প্রয়োগের জন্য একটি বিশেষায়িত কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা আবশ্যক।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভূমিকম্প-ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে তুরস্কে ইস্তাম্বুল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেশন ইউনিট ইস্তাম্বুল সেসমিক অ্যান্ড ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ারনেস প্রোগ্রাম (আইপিসিইউ-আইএসএমইপি), নেপালে ন্যাশনাল সোসাইটি ফর আর্থকোয়েক টেকনোলজি (এনএসইটি), ইন্দোনেশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট (পিইউএসকেআইএম, যুক্তরাষ্ট্রে পেসিফিক আর্থ ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্স সেন্টার, জাপানে বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিআরআই) এবং ইরানে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূমিকমে্পর ক্ষতি ব্যাপক হারে কমানোর প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, বাংলাদেশের কোনো সংস্থায় ভবনসমূহের ঝুঁকি নিরুপণ করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রক্রিয়ার কোনো অনুসন্ধান ও পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা নেই। বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন আনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি শহর যেমন: সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং, এসব নগরে ভূমিকম্প মোকাবিলার কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। প্রস্তাবিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সুফল পাওয়ার জন্য এর কার্যক্রম শুধুমাত্র ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে দেশব্যাপী, বিশেষ করে উল্লিখিত বড় বড় শহরগুলোতে পরিচালনা করাই যুক্তিযুক্ত।

এই সেমিনারে বক্তারা বিল্ডিং কোড এনফোর্সমেন্ট ও আপডেটিংয়ের বিষয়ে আলোকপাত করেন। কারণ, একটি আপডেটেড বিল্ডিং কোড ছাড়া টেকসই ও ভুমিকম্প প্রতিরোধী ইনফ্রাস্টাকচার বা স্মার্ট সিটি ডেভেলপমেন্ট সম্ভব নয়। 

এ বিষয়ে এস কে ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড ২০২০ সালের নামে গেজেট হলেও তা আসলে ১৪ বছরের পুরনো। এর ফলে হাই-স্ট্রেন্থ গ্রেড রিবার (যেমন: ৮০ বা ১০০ গ্রেড রিবার) থেকে শুরু করে অনেক উন্নত নির্মাণ পণ্য ব্যবহার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এসব পণ্য টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই, বিল্ডিং কোড আপডেটিংয়ের বিষয়টি প্রতি ৫-৬ বছর পর পর যেন প্রফেশনালদের মাধ্যমে করা হয়।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন—গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম, রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আন্তর্জাতিক দলনেতা ড. এস কে ঘোষ, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কিমিরিও মেগুরো, বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমদ আনসারী এবং রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ প্রমুখ।

 পারভেজ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়