ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

‘নিমতলী ট্র্যাজেডি মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশসহ চার সংস্থা দায় এড়াতে পারে না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৩ জুন ২০২৪   আপডেট: ২০:৩৪, ৩ জুন ২০২৪
‘নিমতলী ট্র্যাজেডি মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশসহ চার সংস্থা দায় এড়াতে পারে না’

‘নিমতলী ট্র্যাজেডির দায় এড়াতে পারে না শিল্প মন্ত্রণালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ। দায়ীদের বিচারের আওতায় এনে সুবিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।’

সোমবার (৩ জুন) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতি এসব কথা বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আজহার হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে অগ্নিকাণ্ডগুলোর অন্যতম বড় দুর্ঘটনা নিমতলী ট্র্যাজেডি। আজ সেই মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক ঘটনার ১৪ বছর অতিক্রান্ত হলো। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি দেশে আইনের শাসনের দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতা আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট উদাহরণ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে ভয়াবহ আগুনে ঝরে যায় ১২৪টি প্রাণ। রাসায়নিকের গুদামে রক্ষিত দাহ্য পদার্থের কারণেই পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে, এ হতাহতের ঘটনায় ডিএমপির বংশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। কোনো মামলা হয়নি। এতে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ীদের শনাক্ত করা যায়নি। বহুল আলোচিত এ ঘটনায় কাউকে দোষী করা যায়নি। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের না হওয়ায় দায়ীদের বিচারের বিষয়টি আড়ালেই থেকে গেছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ‘টেক্সটবুক’ উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি রাখে।

নিমতলীর ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি নানা নির্দেশনা জারি হয়। নিমতলী ও চুরিহাট্টা ট্র্যাজেডির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর নির্দেশনা দেন। তবে, তা কার্যকর হয়নি এখন পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী এই মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনায় সব হারিয়ে ফেলা তিন বোনের বিয়ের ব্যবস্থা করেন, তাদের স্বামীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। মন্ত্রিপরিষদ এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। অথচ, মর্মবেদনা জাগানো এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এড়িয়ে গেছেন দায়-দায়িত্ব অথবা দায় চাপিয়েছেন অন্যের ওপর। ২০১০ সালে এলাকাবাসীর গণদাবির মুখে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেয়।

সেই উদ্যোগের পর পেরিয়ে গেছে আরও ১৪টি বছর। এই ১৪ বছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন চারজন মন্ত্রী ও আটজন সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ) তিনজন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক পদে দায়িত্বরত ছিলেন পাঁচজন। কিন্তু, রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদামঘর স্থানাস্তরের অগ্রগতি খুবই মন্থর। নিমতলীর ঘটনায় বংশাল থানায় দায়ের করা জিডির কপি থানা কর্তৃপক্ষ খুঁজে পাচ্ছে না মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিয়ম হচ্ছে, কোনো ঘটনায় জিডি হলে পুলিশকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হয়। কিন্তু, ১৪ বছর পরও প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ। উল্টো জিডির নথিপত্রও এখন থানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এত বড় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনায় জিডির কপি হারিয়ে ফেলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বংশাল থানার দায় রয়েছে। এই দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

চুড়িহাট্টা দুর্ঘটনায় ৭১ জন, সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন, বনানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন এবং বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন প্রাণ হারায়। এরকম দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বিপুল সংখ্যক প্রাণহানিও ঘটেছে। অথচ, এসব দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার একটি নজিরও নেই। মানবাধিকার ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্বে অবহেলাজনিত ব্যর্থতার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

হাসান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়