ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের হয়রানি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন: কমিশন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৪ জুন ২০২৪   আপডেট: ০৮:৩৭, ৪ জুন ২০২৪
মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের হয়রানি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন: কমিশন

বিপুল সংখ্যক কর্মী শেষ সময়ে মালয়েশিয়া যেতে না পারার ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে শিগগিরই তদন্ত করে প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করে সংস্থাটি। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সুয়োমোটো পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

সোমবার (৩ জুন) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার (১ জুন) বিভিন্ন গণমাধ্যমে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।

কমিশনের স্বতঃপ্রণোদিত প্রতিবেদন মতে, ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও উড়োজাহাজের টিকিট সংকটে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো উড়োজাহাজে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে এবং বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা এ জন্য দায়ী করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি ও উদাসীনতাকে।

তারা বলছেন, গত মার্চেই মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী প্রবেশের জন্য ৩১ মে (২০২৪) পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও মন্ত্রণালয় এ নিয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেয় ১৬ মে। এতে শেষ মুহূর্তে উড়োজাহাজের টিকিটের তীব্র সংকট তৈরি হয়। অন্যদিকে ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের ডেটলাইনকে ঘিরে মে মাসের শেষ ১০ দিনে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে টিকিটের অজুহাতে ৫০ হাজার টাকা করে ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সময়সীমার শেষ দিন শুক্রবার (৩১ মে) মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ চেষ্টা করতে টিকিট ছাড়াই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় জমান হাজারো মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেতে না পেরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মে থেকে দেশটিতে আর নতুন বিদেশি শ্রমিক ঢুকতে পারবে না। সে হিসাবে আবারও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। এ কারণে শেষ দিন সকাল থেকে রিক্রুটিং এজেন্সির আশ্বাসে উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই বিমানবন্দরে ছিলেন হাজারো মালয়েশিয়াগামী। তাদের কেউ কেউ দুই-তিন দিন ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন। এসব কর্মীর মধ্যে বেশিরভাগই জমি বা শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার টাকা জোগাড় করেন।

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মালয়েশিয়া গিয়েও সিন্ডিকেটের প্রতারণার কারণে কাজ না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেকার জীবনযাপন করছেন অনেকেই।

মালয়েশিয়া বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এর আগে বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করলেও পরবর্তী সময়ে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে দেশটিতে পুনরায় শ্রম বাজার খোলা হয়। মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, তারা মালয়েশিয়ার ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না। প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায়ের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

কমিশন মনে করে, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে শিগগিরই তদন্ত করে প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ অভিযোগে উল্লিখিত শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।

এ প্রেক্ষাপটে সুয়োমটোর আদেশে বলা হয়, প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগটি তদন্ত করে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও যথাসময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে না পারার পেছনে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; ভিসা পাওয়া শ্রমিকদের মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নাম-সর্বস্ব কোম্পানিতে শ্রমিকদের পাঠানো এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার পর কাজ না পাওয়ার বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা সুষ্ঠু তদন্তের পর জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে জানাতে সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে বলা হোক। এ বিষয়ে আগামী ১০ জুলাই প্রতিবেদনের জন্য তারিখ ধার্য করেছে কমিশন।

এদিকে, ২ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। যেতে না পারার কারণ খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট এবং সুপারিশ দেবে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, আমি বিশ্বাস করি যারা এর জন্য দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়