ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৫ ১৪৩১

বেচাবিক্রিতে খুশি নন খামারি-ব্যাপারীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ১৫ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৩:৪১, ১৫ জুন ২০২৪
বেচাবিক্রিতে খুশি নন খামারি-ব্যাপারীরা

আগামী সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হবে। সেই হিসাবে ঈদের বাকি মাত্র একদিন। গতকাল শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে শুরু হয়েছে টানা পাঁচদিনের সরকারি ছুটি। যে কারণে শুক্রবার থেকে কোরবানির পশুর হাট জমবে বলে ধারণা করেছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর বছিলা পশুর হাটে কোরবানির পশু নিয়ে আসা খামারি ও ব্যাপারীরা। 

শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে সরেজমিনে বছিলার অস্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় থাকলেও কেনাবেচা কম। তবে গত দু'তিন দিনের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান হাটের খামারি ও ব্যাপারীরা। তারপরও বেচাবিক্রিতে খুশি নন তারা। 

দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্রেতার হাঁকডাক জমেছে, তবে ক্রেতা কম। যারা এসেছেন অধিকাংশ দরদাম যাচাই-বাছাই করে চলে যাচ্ছেন। বেচাকিনি কম বলে সঙ্গত কারণে হাসিল ঘরেও খুব বেশি চাপ নেই। 

হাটের কোরবানির পশু নিয়ে আসা খামারি ও ব্যাপারীরা বলছেন, ক্রেতারা দাম অনেক কম বলছেন। বেশিরভাগ ক্রেতা এসেছেন ঘুরে দেখতে, কিনবেন আরও পরে। 

অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের থেকে এবার গরুর দাম অনেক বেশি। ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার প্রতিটি গরুর দাম অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি চাইছে খামারি-ব্যাপারীরা। বছিলা পশুর হাটে মাঝারি আকারের (৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ) দেশি গরু বেশি দেখা গেছে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী নাজমুল হুদা। তিনি এসব গরু স্থানীয় কৃষক–খামারিদের থেকে কিনেছেন। গত দুই দিনে মাত্র তিনটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরু বিক্রি করে তাদের লোকসানই হচ্ছে। যেসব কৃষক ও খামারি দুই-এক সপ্তাহ আগে আমাদের মতো ব্যাপারীদের কাছে বাড়ি থেকেই গরু বিক্রি করে দিয়েছেন, তারা কিছুটা ভালো দাম পেয়েছেন। এখন বাজার কমে যাচ্ছে। আমাদের এবার পুঁজিও উঠবে না। 

৪০টি গরু নিয়ে এসেছে সাদেক এগ্রো। এরমধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শাহীওয়াল জাতের ১০ মণ ওজনের একটি গরু। দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে চার লাখ। সাদেক এগ্রোর সুলতান বলেন, বড় গরু বিক্রি এবার কম। গত দুই দিন আর আজ সকাল পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি গরু বিক্রি হয়েছে। এর সবগুলোই দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজারের মধ্যে। 

সাড়ে সাত মণ ওজনের একটি গরু নিয়ে আসা নাজিম উদ্দিন বলেন, গ্রামে দুই লাখ টাকা বলেছিল এক ব্যাপারী। এখন পর্যন্ত হাটে কেউ দেড় লাখের বেশি দাম বলেনি। গত রোজার মধ্যে বিক্রি করলেও আরও ভালো দাম পেতাম। এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় এ গরুর বাছুর কিনেছি। এরমধ্যে দুই বছর লালনপালন করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে বিক্রি করলে লোকসান হবে। তারপরও আজ-কালের মধ্যে আরও ভালো দাম পাবার আশা করছি। 

বগুড়ার ব্যাপারী এমদাদ মুন্সি বলেন, ১০টি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে তিনটি বিক্রি করেছি। তবে দাম আশানুরূপ পাইনি। চার-পাঁচ মণের গরুগুলো এক থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি কেউ দাম বলছে না। প্রতিটি গরুর দাম আরও ১৫-২০ হাজার টাকা বেশি হলে বিক্রি করে দেবো। 

মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শামীম বলেন, গত বছরের চেয়ে প্রতিটি গরু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি মনে হচ্ছে। দুটি গরু ৩ লাখ টাকার মধ্যে কিনতে চেয়েও পারছি না। কাল আবারও কেনার চেষ্টা করবো। 

হাটের ইজারাদার মেসার্স শাহীন ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি শোয়েব বলেন, যতটা হাট জমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততটা বিক্রি এখনও হয়নি। গত দুই দিনে একশো গরুও বিক্রি হয়নি। আজ ৫০০ থেকে এক হাজার গরু বিক্রি হবে বলে ধারণা করছি। 

এদিকে, ছাগলের দাম গত বছরের মতো বলে মনে করছেন ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের খাসি ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাংস প্রায় ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা দর ধরে দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে ৮০০ টাকা হলেও বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানান ছাগল ব্যাপারী দুলাল মিয়া।

এমএ/ইমন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়