বিকেলে সচিবদের বৈঠক
আলোচনায় দুর্নীতি শুদ্ধাচার ও সুশাসন, আসছে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতি, কিশোরগ্যাং, মাদকের বিস্তারসহ নানা সমস্যা ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদের নিয়ে সচিব সভা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সভাটি। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সভাপতিত্ব করবেন। সভায় মন্ত্রণালয়, বিভাগের সচিব ও সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স হুঁশিয়ারির মধ্যেই প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিশেষ করে সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক আইজিপি, এনবিআর কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ ধরপাকড়ের ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ব্যক্তির দায় সরকারকে নিতে হচ্ছে। সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপকর্ম, দুদকের ধরপাকড় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই সচিবদের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যে-ই হোক দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব।’
এর আগে তিনি দেশে কিশোরগ্যাং এবং মাদকের বিস্তাররোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। গ্রামাঞ্চল বলেন সবখানেই কিশোরগ্যাং এর উৎপাত। বিভিন্ন স্থানে কিশোরগ্যাং বখাটের হাতে খুনের ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে দেশে মাদকের বিস্তার ঘটছে। মাদক কিনতে না পেরে মা বাবাকে মেরে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনাও ঘটছে দেশে। মাদকের জন্য দেশে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব নিয়েও উদ্বিগ্ন অভিভাবকসমাজ।
ধারণা করা হচ্ছে, আজকের সচিব সভায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতি, কিশোরগ্যাং, মাদকের বিস্তারসহ তৃণমূলের নানান সমস্যা আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সচিবদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে বৈঠকে।
সাধারণত, প্রধানমন্ত্রী সচিব সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না সচিব সভায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে নানা দিক-নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। প্রথম বৈঠকের পাঁচ মাসের মাথায় এ বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে শুদ্ধাচার, সুশাসন, নির্বাচনি ইশতেহার ও বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এসব এজেন্ডার মধ্যে প্রাধান্য পেতে পারে শুদ্ধাচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষটি। শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তি পর্যায়ে সৎ, কর্মঠ, দায়িত্বশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া দরকার। আর সুশাসনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত হওয়ার বিষয়টি। তাই আজকের সভায় দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের ওপর জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত সচিব সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনি ইশতেহার ও বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে সেটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা আসতে পারে।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতিতে সবাই বিব্রত। এই সভা থেকে এ নিয়ে কড়া নির্দেশনা আসতে পারে।
আলোচ্য সূচিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ, সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও এর আওতাধীন দফতরসমূহের শূন্যপদ পূরণ (যেসব উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে অথচ জনবল নিয়োগ হয়নি সে সব শূন্যপদ পূরণ, ওয়েবপোর্টাল নিয়মিত হালনাগাদকরণ, সুনীল অর্থনীতির কার্যক্রম সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ, ডি-নথিতে ডিজিটাল স্বাক্ষর চালুকরণ, পরবর্তী জেনারেশন এপিএ প্রবর্তন, ব্রিটিশ আমলে (৩ মে ১৭৯৯ হতে ১৮ এপ্রিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) ইংরেজি ভাষায় প্রণীত আইনসমূহ বাংলায় যুগোপযোগী করে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম; কেন্দ্রীয় রেকর্ড রুম স্থাপন, মন্ত্রিসভা বৈঠক, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
/নঈমুদ্দীন/সাইফ/