ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

১০০ কর্মদিবসের কর্মপরিকল্পনা ৭৮ শতাংশ বাস্তবায়নের দা‌বি পরিবেশমন্ত্রীর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ৪ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৯:২৯, ৪ জুলাই ২০২৪
১০০ কর্মদিবসের কর্মপরিকল্পনা ৭৮ শতাংশ বাস্তবায়নের দা‌বি পরিবেশমন্ত্রীর

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্মদিবসের কর্মপরিকল্পনার ম‌ধ্যে ৭৮ ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে ব‌লে দা‌বি ক‌রে‌ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দা‌বি ক‌রেন তি‌নি। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়সহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঘোষিত ২৮টি অগ্রাধিকারের মধ্যে ২২টি পুরোপুরি এবং ৪টি আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আংশিক বাস্তবায়ন বিবেচনায় নেওয়া হলে বাস্তবায়নের হার হবে ৮৫ শতাংশ। উদ্যোগ গ্রহণ করা সত্ত্বেও ২টি অগ্রাধিকার কর্মপ‌রিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

পরিবেশমন্ত্রী বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) হালনাগাদের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর পরিবীক্ষণের উদ্যোগ করা হয়েছে।

‘কিছু পদ্ধতিগত বিষয়ের জন্য অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বায়ুদূষণের প্রতিটি উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ মোকাবিলায় ন্যূনতম একটি করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বায়ুদূষণ রোধে দেশব্যাপী ন্যূনতম ৫৮১ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ হালনাগাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

তি‌নি বলেন, ‘ন্যাশনাল সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্লাস্টিকদূষণ থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’-এর তালিকা প্রণয়ন এবং প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা করা হয়েছে। পণ্য প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকদের পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেসপন্সিবিলিটি’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিল্প কারখানার ইটিপি কার্যকরভাবে চালু রাখতে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন মনিটরিং চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সচিবালয়কে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ ফ্রি ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে সব মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পরিবেশদূষণ রোধে প্রতি বিভাগে দুটি করে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ ফ্রি স্কুল ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাহাড়, টিলা ও প্রাকৃতিক জলাধারে ম্যাপিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সবুজ ক্যাটাগরিভুক্ত ছাড়পত্র ‘সেলফ অ্যাসেসমেন্ট’ এর আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও সৃষ্ট সম্ভ্যাব্য দূষণের পরিধি, মাত্রা এবং পরিবেশ ও মানবস্বাস্থের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের ক্যাটাগরি হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জবরদখলকৃত ৫১ হাজার ৭ একর বনভূমি উদ্ধারের প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে, জা‌নি‌য়ে সা‌বের হো‌সেন চৌধুরী ব‌লেন, ইতোপূর্বে পাঠানো ১ লাখ ৮৭ হাজার একর দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের প্রস্তাব বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের হার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় যথাযথ বাস্তবায়নে পরিবীক্ষণ সুসংহত করতে অনলাইন কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

তি‌নি জানান, অর্থবহ ও কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত এপ্রিলে ঢাকায় ন্যাপ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় প্রস্তাবিত প্রস্তাবসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ থেকে অর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে  প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে’ যোগ ক‌রেন মন্ত্রী।

পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও এবং সিএসও-দের নিয়ে একটি ‘পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, জা‌নি‌য়ে মন্ত্রী ব‌লেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ‘হোল অব গভর্নমেন্ট’ এবং ‘হোল অব সোসাইটি’ অ্যাপ্রোচ বাস্তবায়নে কাজ চলমান আছে। বাজেটে ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন’ থিম অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, আগামী অর্থবছরেও এ উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তি‌নি জানান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিজমি রক্ষার্থে সরকারি নির্মাণকাজে ১০০ ভাগ ব্লক ব্যবহারে সংশোধিত রোডম্যাপ অনুমোদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তবে তা চূড়ান্ত করা যায়নি । ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রস্প্যারিটি প্লান’ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কর্মকৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, চূড়ান্ত করার কাজ চলমান আছে।

‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাসে খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও চূড়ান্ত করা যায়নি ব‌লে স্বীকার ক‌রেন মন্ত্রী।

তি‌নি ব‌লেন, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি বিভাগে দুটো জিরো ওয়েস্ট ভিলেজ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বনভূমি রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন মন্ত্রী।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়