ঢাকা     সোমবার   ০৮ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৪ ১৪৩১

পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাসের প্রতীক: সেতুমন্ত্রী 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৫ জুলাই ২০২৪  
পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাসের প্রতীক: সেতুমন্ত্রী 

সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদ্মা সেতুর আউটলুক উপহার দেওয়া হয়

পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হার না মানা মানসিকতা, কমিটমেন্ট আর আত্মবিশ্বাসের অনন্য প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।    

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। 

বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু দিয়ে সড়কপথে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এর পর ২০২৩ সালে পদ্মা সেতুতে চালু করা হয় রেলপথ।

বিশ্ব ব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু, দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সংস্থাগুলো। পরে আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণ হয় যে, এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এরপর বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে ফিরে আসার আগ্রহ দেখালেও বঙ্গবন্ধুকন্যা সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষদিকে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হলো নিজের টাকায় পদ্মা সেতু। এই সাহস তিনি কোথা থেকে পেলেন? বঙ্গবন্ধুর মেয়ে বলেই পেরেছেন। বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিয়ে সরে গেলো ২০১২ সালের জুলাই মাসে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন, আমি আমাদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমার আজও মনে পড়ে।

এই ঘোষণার পরে খোদ সরকার এবং দলের অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি যে, নিজেদের অর্থায়নে সম্ভব। সে কথা উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, নেত্রী যখন ঘোষণা দিলেন, এটা নিয়ে শোরগোল।...পাগল নাকি। বিশ্বব্যাংক যদি পদ্মা সেতু না করে, আমাদের কি এমন টাকা আছে যে, আমরা করতে পারব? নেত্রী আপনার সহকর্মীরাও সমালোচনায় মুখর! আমাকে উদ্দেশ্য করে অনেকেই কত কথাই না বলেছেন। আজ আমরা পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠান করছি। 

পদ্মা সেতু কীভাবে মানুষের স্বপ্নের এবং সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত সেতু তারও ব্যাখ্যা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু মাকে নিয়ে যে ছেলেটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল নদীর ওপারে। ফেরী নেই, লঞ্চ নেই, স্পিডবোট নেই। পদ্মার তীব্র স্রোত। দিন যায়, রাত গড়ায়, সকাল আসে। ওই পদ্মা পাড়েই মা ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। সেই মাতৃহারা সন্তান জানে, পদ্মা সেতু কী এবং কেন? লঞ্চডুবি, মায়ের বুকে সেদিন বাচ্চা। প্রবল স্রোত। স্রোতের টানে মায়ের আঁচল থেকে ভেসে গেলো অবুঝ শিশু। সে সন্তানহারা হলো। মা জানে, পদ্মা সেতু কী এবং কেন? বাবার জানাজায় অংশ নিতে মাওয়া প্রান্তে ছেলে বসে আছে। লঞ্চ নেই, ফেরী নেই, স্পিড বোট নেই। জানায়ায় ছেলে অংশ নিতে পারেনি। যে সন্তান তার পিতার জানাজায় অংশ নিতে পারল না, সে জানে পদ্মা সেতু কী এবং কেন?’ 

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, তা উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কমিটমেন্ট কাকে বলে... এই পদ্মার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা... মনে আছে? ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। এর আগের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর পদ্মা এলাকায় ঘন কুয়াশা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। প্রথম স্প্যান পিলারের ওপর বসবে। নেত্রী তখন ওয়াশিংটনে। নেত্রীকে ফোন করলাম। তৎকালীন সচিব আনোয়ার সাহেব আমার পাশে। নেত্রীকে বললাম, প্রথম যে স্প্যানটা বসবে, আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনি ফিরে আসলে আপনার উপস্থিতে প্রথম স্প্যান বসাবো। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়াশিংটন থেকে বললেন, আমার জন্য পদ্মা সেতুর কাজ এক মিনিটও অপেক্ষা করা যাবে না। এটা হলো কমিটমেন্ট। এই কমিটমেন্টের সোনালী ফসল এই পদ্মা সেতু।’ 

পদ্মা সেতু নির্মাণে হাজারো চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা ছিল। এমনই এক ঘটনা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এক মধ্যরাতে কন্ট্রাক্টরদের মাথায় হাত। ওইদিকে জাজিরা ভাঙছে, এদিকে লৌহজং ভাঙছে। এর মধ্যে কন্ট্রাক্টরদের ইয়ার্ড, যন্ত্রপাতি হুমকির মুখে। পানির স্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করলাম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন ধরলেন। আমার দু’চোখ ভরে তখন পানি। আমি অশ্রু সম্বরণ করতে পারছিলাম না। একই অবস্থা খন্দকার আনোয়ারের, একই সঙ্গে পিডি শফিকেরও। নেত্রী সঙ্গে সঙ্গে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কন্টাক্ট করলেন এবং এখানে যত দরকার জিও ব্য্যাগ সরবরাহ করতে বললেন। এই হচ্ছে শেখ হাসিনা। এই হচ্ছে তার বিচক্ষণ, দূরদর্শী, সাহসী নেতৃত্ব। আজ স্মৃতিগুলো বারবার মনে পড়ছে।’ 

পদ্মা সেতুর নামকরণের ক্ষেত্রে এর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে দাবি করা হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজের নামে এই সেতু করতে না করে দেন। সেই কথা তুলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে দাবি উঠেছিল। সারা বাংলাদেশে বহু মানুষ দাবি তুলেছিল। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হবে পদ্মা নদীর নামে। আমার নাম ব্যবহার করা যাবে না।’  

এ সময় ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সঙ্গে আপনার নাম মিশে গেছে। যতদিন এই বাংলায় পদ্মা সেতু থাকবে, পদ্মা নদীর ওপরে, ততদিন শেখ হাসিনার নামও উচ্চারিত হবে সগৌরবে।’ 

‘আপনার সাহস, আপনার দূরদর্শিতা আমাদের বিশাল সম্পদ। সঙ্কটে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাহস দেয়।’ 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিম সং প্রচার করা হয়। এছাড়া, পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক ও পদ্মা সেতুর একটি আউটলুক উপহার দেওয়া হয়। 

পারভেজ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়