ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

৭ খাতে বিনিয়োগ হবে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১৫ জুলাই ২০২৪  
৭ খাতে বিনিয়োগ হবে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ

ছবি: ইন্টারনেট

সাত খাতে বিনিয়োগ করা হবে সর্বজনীন পেনশনের তহবিলের অর্থ। খাতগুলোর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড, ট্রেজারি বিল ও সরকারি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পও রয়েছে। তবে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ কোনোক্রমেই ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যাবে না। একইসঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের বাইরেও বিনিয়োগ করা যাবে না এই তহবিলের অর্থ। কোনো একক খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ তহবিলের মোট অর্থের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। তবে কোনো সরকারি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

সর্বজনীন পেনশন তহবিল (বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) বিধিমালা ২০২৪-এ এসব বিধান রাখা হয়েছে। বিধিমালাটি সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে-সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ সুকুকসহ অন্যান্য সরকারি সিকিউরিটি; বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক অনুমোদিত বা নিয়ন্ত্রিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড; বিএসইসি কর্তৃক অনুমোদিত ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির বন্ড; সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থা কর্তৃক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য গৃহীত বাস্তবায়নাধীন বা বাস্তবায়িত কোনো প্রকল্প বা প্রকল্পের সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ এবং কোনো তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা যাবে।

তফসিলি ব্যাংকের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে-বাংলাদেশে অনুমোদিত রেটিং সংস্থা বা স্বীকৃত কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক দীর্ঘ মেয়াদে অন্যুন ‘এএ’ এবং স্বল্প মেয়াদে অন্যূন ‘এসটি-১’ বা সমমান রেটিং সম্পন্ন কোনো তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখা যাবে। তবে কোনো তফসিলি ব্যাংককে একাধিক রেটিং সংস্থা কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন রেটিং দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে নিম্নতম রেটিংকে প্রকৃত রেটিং হিসাবে গণ্য করতে হবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে। দেশের আর্থিক বাজার ও পুঁজিবাজারসহ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রসমূহ পর্যালোচনা-পূর্বক কম ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক লাভজনক পোর্টফোলিও বা খাতে বিনিয়োগের জন্য কমিটি সুপারিশ প্রদান করবে। যথাসম্ভব পরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সুশাসন নিশ্চিত করে বিনিয়োগের খাতসমূহ নিরূপণ করতে হবে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটি সর্বোচ্চ ডিউ ডিলিজেন্স প্রয়োগ করে সুপারিশ প্রদান করবে। তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশসমূহ পর্যালোচনাপূর্বক ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ’ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এই কমিটি সভায় প্রয়োজনীয় যে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে। কমিটির সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

এছাড়া সর্বজনীন পেনশন তহবিলের ব্যবসা উন্নয়ন ও তহবিলের অনুকূলে সম্পদ আহরণ, বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ নিরূপণ ও তহবিলের পুঞ্জিভূত অর্থের হিসাব পর্যালোচনা-পূর্বক কমিটি পেনশন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে। বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি যেকোনো ব্যক্তিকে কমিটির সভায় আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে, আমন্ত্রিত ব্যক্তি সভায় নিজস্ব বক্তব্য দিতে পারবেন, কিন্তু তার ভোট দেওয়ার কোনো ক্ষমতা থাকবে না।

তহবিলের ব্যাংক হিসাব-এর বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় ঘোষিত স্কিমসমূহের নামে এক বা একাধিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পৃথক পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে। এছাড়া স্কিমের সুবিধার্থে বাংলাদেশে অনুমোদিত রেটিং সংস্থা বা স্বীকৃত কোসো আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক দীর্ঘ মেয়াদে অন্যুন ‘এএ’ এবং স্বল্প মেয়াদে অন্যূন ‘এসটি-১’ বা সমমান রেটিং সম্পন্ন অন্য কোনো তফসিলি ব্যাংকেও অনুরূপ ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে। তবে কোনো তফসিলি ব্যাংককে একাধিক রেটিং সংস্থা কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন রেটিং প্রদান করা হলে সেক্ষেত্রে নিম্নতম রেটিংকে প্রকৃত রেটিং হিসাবে গণ্য করতে হবে।

দেশের জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের বৃদ্ধকালীন জীবন-জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু করতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ প্রণয়ন করেছে সরকার। আইনের আওতায় ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং ওই বছরই ১৭ আগস্ট থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়। শুরুতেই সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিম (প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা) চালু করা হয় এবং সম্প্রতি গত ১ জুলাই থেকে ‘প্রত্যয়’ নামে আরও একটি স্কিম চালু করা হয়েছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ২০২৫ সাালের ১ জুলাই বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। গত ১৪ জুলাই এ বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

/হাসনাত/সাইফ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়