বাতিল হতে পারে লাইসেন্স
৩০ লাগেজ বিড়ি-জর্দা পাচারের চেষ্টা, তিন হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পরিকল্পিতভাবে হজযাত্রীদের নাম দিয়ে ৩০ লাগেজ তামাকপাতা, বিড়ি, জর্দা, গুল ইত্যাদি গোপনে দেশটিতে পাচারের অভিযোগে ৩টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ৩ এজেন্সিকে শোকজ করা হয়েছে। রোববার (১৪ জুলাই) পাঠানো নোটিসে তাদের বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিসপ্রাপ্ত তিন এজেন্সি হলো- লিড এজেন্সি খিদমাহ ওভারসিজ এবং সমন্বয়কারী এজেন্সি জিলহজ্ব ট্রাভেলস ও আত-তাবলীগ হজ সার্ভিস।
জানা গেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে এজেন্সিমালিক ও তামাক পাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এজেন্সি ৩টির লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১১ জুন ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লিড এজেন্সি খিদমাহ ওভারসিজের মোট ১৯৫ জন হজযাত্রীর মধ্যে ঐ এজেন্সির ১১১ জন, সমন্বয়কারী এজেন্সি জিলহজ্ব ট্রাভেলসের ৩৪ জন এবং আত-তাবলীগ হজ সার্ভিস’র ৩৭ জন নিবন্ধিত হজযাত্রী ছিলেন।
ফ্লাইনাসের ওই ফ্লাইটে লিড এজেন্সি খিদমাহ ওভারসিজের হজযাত্রীদের চেক-ইন চলাকালে তামাক পাতা, জর্দা ও বিড়িসহ একটি লাগেজ শনাক্ত করা হয়। কিন্তু সেটি সুনির্দিষ্ট কোনও হজযাত্রীর লাগেজ ছিল না। খিদমাহ ওভারসিজের মোনাজ্জেম মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, জিলহজ্ব ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুস সাত্তার এবং গ্রুপ লিডার মো. বাবুল মিয়া শনাক্ত করা ওই লাগেজসহ ৩০টি লাগেজ নিয়ে হজক্যাম্প ত্যাগের চেষ্টা করলে ক্যাম্পের মূল ফটকে বাংলাদেশ স্কাউটের সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগুলো জব্দ করে। ৩০টি লাগেজের মধ্যে দুটি লাগেজের তালা ভাঙা হয়। সেখানে বিপুল পরিমাণ তামাক পাতা, গুল, জর্দা ও বিড়ি পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওইদিন গ্রুপ লিডার বাবুল মিয়া জানান, ৩০টি লাগেজের সবগুলোতেই এমন সামগ্রী আছে। জানা গেছে, ৩০টি লাগেজ আশকোনার হজ অফিসে জব্দ অবস্থায় রয়েছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। দুটি লাগেজ ছাড়া প্রায় সবগুলোতেই হজযাত্রীর নামসহ কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। লাগেজগুলোর ভেতরে রাখা অবৈধ পণ্য সামগ্রী হজযাত্রীর নয়; বরং সংশ্লিষ্ট ৩টি এজেন্সির লোকজনই পরিকল্পিতভাবেই হজযাত্রীদের নাম দিয়ে গোপনে অবৈধভাবে সৌদি আরবে পাচার করতে চেয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, তামাক পাতা-জর্দা ও গুল ভর্তি এই ৩০টি লাগেজ সৌদি বিমানবন্দরে ধরা পড়লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হতো এবং সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তো। সৌদি আরবগামী ফ্লাইটে তামাক পাতা-জর্দা ও বিড়ি পরিবহনে সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ এর পরিপন্থীও।
এর আগে, জেদ্দা বিমান বন্দরে হজযাত্রীর লাগেজে তামাক পাতা-জর্দা ও গুল ধরা পড়ে। সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ ঘটনায় লিখিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধও জানায়। যার কারণে ২০২৪ সালে পবিত্র হজে তামাক, গুল, বিড়ি ইত্যাদি পরিবহনে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ