ঢাকা     শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩২

দখল-বেদখলে বিপর্যস্ত বনভূমি, উদ্ধারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই

জ্যেষ্ঠ প্রতি‌বেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৬, ১৫ জুলাই ২০২৪  
দখল-বেদখলে বিপর্যস্ত বনভূমি, উদ্ধারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই

দেশের বনাঞ্চল দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। সারা দেশে বনের জমি ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৮৪ একর বেদখল হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বনের জমি। সংরক্ষিত বনভূমির দখলদার চিহ্নিত হয়েছে ৮৮ হাজার ২১৫ জন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত জলবায়ু পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক থিমেটিক কমিটির সভার আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভার আলোচনায় আরও উঠে আসে, বনের এসব জমি দখল করে করা হয়েছে শিল্প-কারখানা, রিসোর্ট, বসতভিটা। আবার অনেক জায়গায় বনের জমি দখল করে চাষাবাদ করা হয়েছে। প্রভাবশালীদের নাম থাকায় বনের জমি উদ্ধার হয় না। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনভূমি চরমভাবে হুমকির মুখে। সেখানে বন বিভাগও অবৈধ দখলদার ও বনখেকোদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা করে দায় শেষ করছে তারা। আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার ফলে বনের জমি দখল ও গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। 

সভায় ১৪টি আলোচ্যসূচির উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এ থিমেটিক কমিটির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ প্রেরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। 

সভায় আরোও আলোচনা হয় যে, অতিবৃষ্টি ও বন্যা মোকাবেলাসহ অতিবৃষ্টির পানি ধরে রাখতে ও পরিবহন করতে হাওর ও নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্রমাগত অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নদী-হাওর-বিল দখল ও ভরাট, নদীর নাব্য সংকট, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জমি ভরাট ও পূর্ব-পশ্চিমে আড়াআড়ি মহাসড়ক নির্মাণ বন্ধ করতে কমিশন সরকারের নিকট একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করবে।

অপর দিকে বায়ুদূষণ রোধকল্পে সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ যথাযথ পদ্ধতি ও নীতিমালা মেনে পরিচালনার প্রতি কমিশন জোর আরোপ করে। বায়ুদুষণ রোধে বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২ এবং আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রায় কার্যকরকরণে সর্বান্তরকরণে সচেষ্ট থাকতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরেকে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সীমান্তঘেঁষা ৩৫টি জেলায় বিস্তার ঘটেছে ‘পার্থেরিয়াম’ নামের এক উদ্বেগজনক আগাছার। এটি বেগুন, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন কমিয়ে দেয়। ধান, ছোলা, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের অঙ্কুরোদ্গম ও বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ফলে পার্থেনিয়ামের বিস্তার খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এ আগাছার বিস্তার রোধকল্পে জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন দপ্তর, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্লান্ট কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানে সভায় সকলে ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন।

সভায় কমিশনের সম্মানিত সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, পিকেএসএফ-এর পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহেমেদ, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভোলপমেন্টে নির্বাহী মোহাম্মদ সামসুদ্দোহাসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

হাসান/তারা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়