ঢাকা     রোববার   ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ৩০ ১৪৩১

ইএলএমসি প্রকল্প সমাপ্ত: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৫, ৩০ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ২০:০৬, ৩০ জুলাই ২০২৪
ইএলএমসি প্রকল্প সমাপ্ত: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকরভাবে অংশগ্রহণের জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ইএলএমসি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি। 

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমরিতে ‘এমপাওয়ারিং লেফট বিহাইন্ড মাইনোরিটি কমিউনিটি (ইএলএমসি)’ প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণকে সক্রিয়করণ এবং বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে কাজ করা হয়।  

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে প্রকল্পের পুরো যাত্রা তুলে ধরা হয়। সংখ্যালঘু অধিকার অ্যাডভোকেসির একটি কৌশলগত রোডম্যাপ উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্মিলিত শিক্ষা এবং সর্বোত্তম অনুশীলন তুলে ধরা হয়। রোডম্যাপে প্রকল্পের ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের ক্রমাগত অ্যাডভোকেসি এবং রিসোর্স মোবিলাইজেশন-ফান্ডিং এবং প্রোগ্রামেটিক দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়। 

ক্রিশ্চিয়ান এইডের কারিগরি সহযোগিতায় এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের আর্থিক সহযোগিতায় কনসোর্টিয়াম মেম্বার হিসেবে ব্লাস্ট, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, নাগরিক উদ্যোগ এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের তিন বিভাগের আট জেলায় ৪২ মাস মেয়াদি ইএলএমসি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ঢাকা শহরের পাশাপাশি রাজশাহী, নওগাঁ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, খুলনা, যশোর এবং সাতক্ষীরায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য—প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬ লাখেরও বেশি মানুষের কাছে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে ১৮ লাখেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো। এ প্রকল্পের লক্ষ্য গোষ্ঠীগুলো হলো—দলিত অধিকার সিএসও এবং সিবিও, হিজরা অধিকার সিএসও এবং সিবিও, সমতল ভূমির আদিবাসী অধিকার সিএসও এবং সিবিও, পরিবর্তন এজেন্ট (সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদল), উপজেলা স্তরের অ্যাডভোকেসি ফোরামের সদস্য, জেলা স্তরের অ্যাডভোকেসি ফোরাম সদস্য, ডিবিশনাল লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড (এলএনওবি) জোটের সদস্যরা। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; কেয়া খান, মহাপরিচালক, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর; মো. সাইদুর রহমান, মহাপরিচালক, এনজিওএবি; ডা. গাজী মো. সাইফুজ্জামান, মহাপরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ’র রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তার বক্তব্যে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো নিবন্ধনের সময় সিভিল সোসাইটি সংস্থাগুলো যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয় এবং এই ছোট সম্প্রদায়ভিত্তিক সংস্থাগুলোর জন্য সহায়তার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে দৃঢ়ভাবে তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, আমরা কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে পারি না, বরং তাদের অধিকারের জন্য তাদের সাথে সমানভাবে কাজ করতে হবে। সম্পদের ক্ষমতায়নই প্রকৃত ক্ষমতায়ন, যা আমাদের এই সম্প্রদায়ের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে সবকিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। 

তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের আরও কয়েকটি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ অতিথি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট অর্থনীতি যা আমাদের দেবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

ইএলএমসি প্রকল্প যে দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করেছে, তা কীভাবে নাগরিক সমাজকে সংখ্যালঘু অধিকার ইস্যুতে তাদের আওয়াজ তুলতে অনুপ্রাণিত করেছিল, সে সম্পর্কে কথা বলেন ইইউ’র রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য রোডম্যাপ উপস্থাপন এবং যাচাই করার লক্ষ্যে বহু স্টেকহোল্ডার সংলাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়। সমাপনী বক্তব্য রাখেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর ডিজি সাইদুর রহমান, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান।

এতে প্রতিটি স্টেকহোল্ডার গ্রুপের জন্য মূল টেকওয়ে নিয়ে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী, খুলনা এবং সিলেট বিভাগ জুড়ে সংখ্যালঘু অধিকারের জন্য করা কাজগুলোর প্রজেক্ট ইমপ্যাক্ট ভিডিও দেখানো হয়। অংশীদার সংস্থাগুলো বিগত সাড়ে ৩ বছরে তাদের কৃতিত্বগুলো এক্সটার্নাল স্টেকহোল্ডারদের কাছে প্রদর্শন করার সুযোগ পায়। 

হাসান/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়