নিরাপদ ও মানসম্মত মৎস্যপণ্য নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে নিরাপদ ও মানসম্মত মৎস্যপণ্য নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৭১ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। এ বছর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ভরব মাছে মোদের দেশ, গড়ব স্মার্ট বাংলাদেশ’।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হিসেবে মৎস্য খাতকে চিহ্নিত করেছিলেন।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারের মৎস্যবান্ধব নীতি, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার কারণে দেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, চাষি পর্যায়ে লাগসই ও জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্মুক্ত জলাশয়ের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় আইন বাস্তবায়ন এবং সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার ফলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৪৯ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে, যা ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের মোট উৎপাদনের (২৩ দশমিক ২৯ লাখ মেট্রিক টন) দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মৎস্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য এখন সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে মিঠা পানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে গত ৫ বছনে বিশ্বে পঞ্চম স্থান ধরে রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও ক্রাস্টাশিয়ান্স আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম এবং সামুদ্রিক মাছ আহরণে ১৪তম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার ২০২৪, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১ এ বর্ণিত মৎস্য সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও স্মার্ট মৎস্য খাত বিনির্মাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তির ফলে অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ, বিশেষত সুনীল অর্থনীতি একটি অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুনীল অর্থনীতির বিকাশে আমরা সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা ২০২২ এবং সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির সর্বোচ্চ সহনশীল আহরণ মাত্রা নির্ধারণপূর্বক সমুদ্রে মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মৎস্য খাতে দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকারের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পারভেজ/রফিক