ঢাকা     রোববার   ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৩১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৭:৫৮, ৩১ জুলাই ২০২৪
ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পিছনে টেনে নেওয়ার চক্রান্তে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হলো?’ এর বিচারের ভার দেশবাসীর কাছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলনের নামে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, ধবংসাত্মক কাজ করা হয়েছে, তাতে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। 

জাতির পিতার কন্যা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি যেহেতু স্বজন হারিয়েছি, স্বজন হারাবার বেদনা আমি বুঝি। তাই, যারা আপনজন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি।’ 

তিনি বলেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে। যে স্থাপনা ধ্বংস করেছে, সেগুলো তো পুনর্গঠন করা যাবে। কিন্তু, যে প্রাণগুলো ঝরে গেলো, সেগুলো তো আমরা আর ফিরে পাব না। 

শেখ হাসিনা বলেন, জানি না, অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই, সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করলো, সেটাই আমার প্রশ্ন?

সরকারপ্রধান বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়। আমি তো আরাম-আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি দেশকে একটু উন্নত করতে। যেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি। 

১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে গুলি, বোমা পুঁতে রাখা, গ্রেনেড হামলাসহ অনেক বার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি তো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা এবং ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবনযাপনকে আরো সহজ করে দেওয়াই লক্ষ্য। কিন্তু, যেসব জিনিস মানুষকে সেবা দেয়, সেগুলোই হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সব থেকে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই জাতির পিতা এ দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষি গবেষণা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, জনগণের পুষ্টির অধিকারও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

জাতির পিতার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, মাছ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’ 

শেখ হাসিনা গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, গভীর সমুদ্রে মৎস ও সমুদ্রসম্পদ আহরণে যতরকম সুযোগ- সুবিধা লাগে, তার ব্যবস্থা সরকার করবে। কারণ, এটা আমাদের কাজে লাগবে।

দেশীয় প্রজাতির মাছ যাতে বৃদ্ধি পায়, সে গবেষণার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সরকারের উদ্যোগ রয়েছে দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিত্যক্ত জলাভূমিগুলোকে কাজে লাগিয়ে মৎস উৎপাদন বাড়ানোর। বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৫ বছর বিশ্বে পঞ্চম স্থান ধরে রেখেছে। 

প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মহলকে আরো উদ্যোগী হয়ে এই অবস্থানকে আরো এগিয়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মাছচাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে সরকার। 

মাছ ও মৎসজাত পণ্য রপ্তানিতে ভ্যালু এডেড করার বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করে মৎস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেশে তিনটি টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠাসহ মৎস খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, এগুলো শুধু আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদাই পূরণ করবে না, জীবন-জীবিকার মানও উন্নত করবে এবং আমরা রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারব। 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতটি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘জাতীয় মৎস পদক-২০২৪’ প্রদান করেন। পুরস্কার হিসেবে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক, সম্মাননা স্মারক এবং টাকা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জেলেদের মধ্যে স্মার্ট আইডি কার্ড বিতরণ করেন। ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মৎস চাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

দেশের মৎস খাতের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার স্বাগত বক্তৃতা করেন। মৎস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর পুরস্কার প্রদান পর্ব সঞ্চালনা করেন।

এসআরপি/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়