ঢাকা     রোববার   ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ২৩ ১৪৩১

মেয়র ছাড়া চলছে ঢাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১১ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ২০:১২, ১১ আগস্ট ২০২৪
মেয়র ছাড়া চলছে ঢাকা

শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্তরূপে দেশজুড়ে সংঘাত, তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মুখে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দুপুরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এর আগে ও পরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে এখনও দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। বাকিরা দেশের মধ্যে আত্মগোপনে রয়েছেন। যে তালিকা থেকে বাদ যাননি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলররাও।

উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর মেয়র, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর যারা আওয়ামী লীগ সমর্থক, তাদের খোঁজ নেই। দুই সিটির ১৭২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৮ জন বিএনপিপন্থি। ওই ১৮ জন ছাড়া অন্য কোনও কাউন্সিলর বর্তমানে অফিস করছেন না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ৩ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন। তবে তার সঙ্গে পরিবারের কোনও সদস্য ছিলেন না বলে রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা।

অপরদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশ ছেড়ে না গেলেও তিনি অফিস করছেন না। তিনি দেশেই আছেন এবং নিরাপদে আছেন বলে ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে। আপাতত তিনি জনসমাগম বা সাধারণ মানুষের সামনে আসছেন না এবং গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন বলেও জানা গেছে।

মেয়র আতিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র হিসেবে রাজনৈতিকভাবে এলেও তিনি তার কাজের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন। তিনি সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা উত্তরের সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য বেশিরভাগ কাউন্সিলর হয় দেশ ছেড়েছেন, নয়তো গা-ঢাকা দিয়ে নিরাপদে অবস্থান করছেন।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৭২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে আওয়ামীপন্থি ১৫৪ জন গা-ঢাকা দিয়েছেন। তারা কেউই অফিস করছেন না। ফলে নাগরিক সেবা নিতে এসে তাদের কার্যালয় থেকে ফিরে যাচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। এ ছাড়া, মশক নিধন কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও অন্যান্য নাগরিক সেবা কাজগুলোও ঠিকমতো চলছে না। তবে, দুই সিটির ১৮ জন বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর নিয়মিত অফিস করছেন এবং তাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যাংকার মিনহাজ রায়হান বলেন, কাউন্সিলর অফিস বন্ধ। কাউন্সিলরের দেখাও মিলছে না। ফলে আমি নাগরিক সনদ সংগ্রহ করতে পারছি না। এ ছাড়া, এলাকার অন্যান্য মানুষরাও বিভিন্ন সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা আসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, দক্ষিণ সিটির বেশিরভাগ কাউন্সিলর পালিয়ে গেছেন। তারা কেউ অফিস করছেন না। সেই প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। ঠিকমতো বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। মশা নিধনের লোকদের দেখা নেই। মশার উৎপাত বেড়েছে, ওষুধ ছেটানো হচ্ছে না। 

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকার নাগরিকদের সব পরিষেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মশক নিধন, বর্জ্য অপসারণ ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমসহ সব সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় তৎপর রয়েছি’।

অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মেয়র স্যার ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে আছেন’। কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ওনারা ঠিকমতো অফিস না করার কারণে কিছু কিছু কাজ অবশ্যই বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে নাগরিক সেবা কার্যক্রমসহ আমাদের রুটিন কাজ আমরা পরিচালনা করে যাচ্ছি’।

এমন পরিস্থিতিতে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান কাউন্সিলরদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবার জরুরি সভা ডাকেন। সেই সভায় দক্ষিণ সিটির ৭৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে প্যানেল মেয়রসহ ৬৫ জনই উপস্থিত ছিলেন না। পরে তিনি বাকি ১০ কাউন্সিলর নিয়ে সভা করেন। সেখানে বর্জ্য অপসরণ, মশক নিধন, সড়ক বাতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে আমাদের সড়ক বাতি, ফুটপাত ও রাস্তার ডিভাইডার ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে। সেগুলো সংস্কারের কাজ চলছে।

এমএ/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়