ঢাকা     শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৮ ১৪৩১

সদরঘাটে যাত্রীর অভাব, স্বাভাবিক হয়নি লঞ্চ চলাচল

লিমন ইসলাম, জবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১৫ আগস্ট ২০২৪  
সদরঘাটে যাত্রীর অভাব, স্বাভাবিক হয়নি লঞ্চ চলাচল

বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রভাব পড়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সদরঘাটে। যাত্রী কমে যাওয়া চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মালিকসহ লঞ্চ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে সদরঘাটে গিয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষসহ এর দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের দূর্ভোগের কথা। তবে অনেকে আশা করছেন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব দ্রুতই তারা এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য বড় বড় লঞ্চ যাত্রীর অপেক্ষায় ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে। সময় অনুযায়ি নিয়ম করে করে যাত্রীর জন্য হাঁক ছাড়ছেন কর্মচারীরা। তবে ঘাটে যাত্রী নেই বললেই চলে। বৃহস্পতিবার হওয়ায় গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ যাত্রী সমাগম একটু বেশি। তবে স্বাভাবিক সময়ে তুলনায় সেটা খুবই কম। যাত্রীর চাপ না থাকায় লঞ্চ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকটাই অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। 

জানতে চাইলে ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি লঞ্চের সুপার ভাইজার মো. জসিম বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে আমাদের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। গত ৯ আগস্ট থেকে লঞ্চ চালু হলেও এখন কেউ খুব প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত করছে না। আজকে রাত ৮টার দিকে লঞ্চ ছাড়বে। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও টিকেট তেমন বিক্রি হয়নি। আমাদের এ সমস্যাগুলো কথা কার কাছে বলবো? সংসারে টাকা পাঠানোই আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

পূবালি-৬ নামের একটি লঞ্চের দায়িত্বে থাকা মিজান নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা বুঝতে পারি, লঞ্চে কেমন যাত্রী হবে। কয়েকদিন থেকে যাত্রী তেমন বাড়ছে না। অনেকে ঢাকা থেকে যাচ্ছে কিন্তু যাত্রীর অভাবে দুদিন পর লঞ্চগুলোকে ফিরে আসতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, এখন মানুষজনের এলাকায় কাজ আছে, জীবনের তাগিদে তারা কর্ম করে এলাকায় দিনযাপন করছে। আবার ছাত্রদের কোটা আন্দোলন পরে দেশের এমন অবস্থায় খুব কম মানুষ ঢাকায় আসছে। আগে ২৫০-৩০০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে যেতাম, আবার এ রকম নিয়ে ফিরেও আসতাম। কিন্তু এখন ১০০-১২০ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।  

ঢাকা থেকে ইলিশাঘাটগামী কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের প্রধান ফরাজি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবার পরে সদরঘাটের যাত্রী কমে গেছে তারপরেও আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় যাতায়াতের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই নদী বন্দর। দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকলে এ সময় আমরা ৩০০ জন করে যাত্রী নিয়ে যেতাম, এখন ১৫০ করে নিয়ে যেতে হয়। যাত্রী কম থাকায় সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৫৪৭ টাকার বদলে ৩০০ টাকা দিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু তেলের দামের সঙ্গে কোনোভাবেই পোষানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার প্রায় সময় যাতায়াত করা লঞ্চযাত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক জিলন বলেন, নতুন সরকার গঠন হয়েছে দেশে। সদরঘাট সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। অনেক টাকা যাত্রীদের কাছে থেকে নেওয়া হয়, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার নৌ-পথের দিকে তাকালে এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করলে সবাই ভালো থাকবে। এ সরকারের কাছে একটা ভাড়ার চার্ট আশা করি। 

একটি লঞ্চে কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, আমরা দিন অনুযায়ী টিকেট বিক্রির উপর কমিশন পায়। অনেকদিন বন্ধ থাকায় এবং এখন যাত্রী কম থাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে গেছে। তারপরও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হচ্ছে। 

এদিকে, কাছাকাছি ৩-৪ ঘণ্টার দূরত্বগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী চলাচল গত ৯ আগস্ট থেকে স্বাভাবিক। যাত্রীরা কাছাকাছি দূরত্বে প্রয়োজনের তাগিদে আসা- যাওয়া করেছেন। 

কম দূরত্বের ঈগল নামক চাঁদপুরগামী লঞ্চের সুপার ভাইজার বাদশা বলেন, আমাদের যাত্রী চলাচলের ধারাবাহিকতা কমেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর থেকেই আগের মতোই ভালো চলছে। কম দূরত্বের হওয়ার কারণে মানুষ নির্ভীকভাবে যাতায়াত করছে। তাছাড়া আমাদের লঞ্চে অনেক ব্যবসায়ী চাঁদপুর থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে আসেন ঢাকা শহরে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কথা হয় বিআইডব্লিউটিএ’র সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে থাকা যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশের এ পরিস্থিতিতে সদরঘাটে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। এ পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো ধরনের সমস্যার কথা আসেনি। আমরা সবসময় মনিটরিং করি দেশের মানুষের ভালোর জন্য, যাতে কোনো অপশক্তি ফায়দা লুঠতে না পারে। ঝামেলা হলে সবাইকে বলা আছে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। কেননা সদরঘাটে টোকাইদের উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে। 

লঞ্চ কর্মচারীদের দুর্ভোগের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে মানুষ একটু কম চলাচল করছে। গতকাল ৫৯টি লঞ্চ গেছে ঢাকা থেকে এবং ৬০টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। কিন্তু এর আগে ১০০টার মতো করে লঞ্চ যাতায়াত করত। অনেক লঞ্চ দুদিন পর যাচ্ছে। তবে দেশ পুর্নগঠন হচ্ছে, আবার আগের মতো লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। আর কাউকে কষ্ট ভোগ করতে হবে না বলে মনে করি।

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়