সাকিবের মামলা ও আ.লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হলেও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের মামলার সময় দেশের সংবাদমাধ্যম চুপ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বুধবার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যেহেতু তিনি একজন তারকা, এটা নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে। এটা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী? এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল ২০০৩ সালের সাফজয়ী জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক, সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপি নেতা আমিনুলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটা আওয়ামী লীগই তো শুরু করেছে, ঠিক না? আমিনুল যে ফুটবলার, সাকিব তো আর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কিছু বয়ে আনে নাই। সাকিব নিজেই অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমিনুল তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল। এনেছিল না? জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন? আমিনুলকে তো জেলে ভরা হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে জাস্ট মামলা হয়েছে।
‘আমিনুলকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দিনের পর দিন জামিন দিচ্ছিল না। দিনের পর দিন। আমি নিজে শুধু প্রথম আলোতে কলাম লিখেছি। আপনাদের কাউকে লিখতে দেখি নাই, আপনাদের পত্রিকায়। একটা জাতীয় দলের (ফুটবলার)... বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সাফ গেমসে (ফুটবলে)... তার ইয়েতে....চ্যাম্পিয়নশিপে। গ্রেপ্তার করেছে... দিনের পর দিন জামিন রিজেক্ট করেছে,’ যোগ করেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘এটা পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপার। আমাদের...আমরা যতটুকু বলার, বলার চেষ্টা করেছি। মামলা হওয়া বা এফআইআর হওয়া মানেই তো গ্রেপ্তার না। আমার বিশ্বাস, আমাদের মানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে কেউ অতি উৎসাহিত হয়ে গ্রেপ্তার না করতে যায়। আমি আশা করি, সাকিব গ্রেপ্তার হবে না। আমি যত দূর জানি, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে বলা আছে যে, অ্যাপারেন্টলি অবিশ্বাস্য কিছু হলে, যতটা পারা যায় আইনের মধ্যে থেকে রিস্টেইন বজায় রাখার জন্য।’
দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না:
অনেকে মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার একটি দাবি হাইকোর্টে (রিট) করা হয়, তখন অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। শক্তভাবে জঙ্গি তৎপরতা, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা থাকলে সেটি সততার সঙ্গে তদন্ত করে এটি (নিষিদ্ধ) করা যেতে পারে। সাধারণ নিয়ম হিসেবে সংবিধানে সংগঠন করার স্বাধীনতা আছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এই দলটির অবদান ছিল। গত ১৫ বছরে তারা যা করেছে, এটি তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না, সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। তারা বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম এক ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে। নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে মনে হয় না।
আদালত চত্বরে আক্রমনণকে সমর্থন নয়:
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে তোলার সময় হামলা আক্রমণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, আদালতে যাওয়ার সময়ে কখনো কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়, কোনোভাবেই সমর্থন নয়।
‘আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নির্মমভাবে আদালতে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। তখন কি এই প্রশ্ন করেছিলেন, টিভিতে কি এই নিউজ দেখাতে পেরেছিলেন?
তিনি বলেন, একটি দল (আওয়ামী লীগ) ও মন্ত্রিসভার সঙ্গে থাকা লোকদের জনগণের শত্রুর পর্যায়ে নিয়ে আসা, এটা তো সাবেক সরকারের দায়ভার। তারা মন্ত্রিসভার সদস্য ও সমর্থকদের এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, একটি জনরোষ তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর জনরোষ ছিল না। সেটি ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
আরও অনেকভাবে অনেক সাংবাদিককে অপদস্থ করা হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বর্তমানে যত্রতত্র মামলা ও আসামি করা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কেউ মামলা করলে রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই মামলা করতে পারবেন না বলার। তবে, তার ও তাদের (সরকার) একটাই করণীয় আছে, সেটি হলো পুলিশ তদন্ত করবে, তদন্তে সুস্পষ্ট তথ্য না পেলে পুলিশ অব্যাহতি দিয়ে দেবে। তদন্ত ও বিচারকাজে যথাযথ প্রক্রিয়া বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে। তবে, সরকার আদালতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
নির্বাচন কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতার কথা বলেছে, এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রথম উপলব্ধি করা উচিত, তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কী ছিল। ভুয়া নির্বাচন করা তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল? তারা আগে বিবেচনা করুক।
নঈমুদ্দীন/রফিক