ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১১ ১৪৩১

পদত্যাগ করলেন সিইসিসহ ইসি সদস্যরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৬:৫৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পদত্যাগ করলেন সিইসিসহ ইসি সদস্যরা

বেগম রাশেদা সুলতানা, আহসান হাবীব, কাজী হাবিবুল আউয়াল, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান

নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ এবং এই সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে পদত্যাগ করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।  

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন সিইসি। সিইসির সঙ্গে চার সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমানও পদত্যাগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমিসহ নির্বাচন কমিশনের সকলেই পদত্যাগের জন্য মনস্থির করেছি। পদত্যাগের কাগজপত্র সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। এখন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে সেগুলো জমা দেবেন।

সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।

সিইসি বলেন, ‘৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রধানতম বিরোধ দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আহ্বান করা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।’

নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার মতো কোনও সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেকারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কখন কী কারণে কতদিনের জন্য স্থগিত করা যাবে-তাও সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। অতীতে কখনই কোনও কমিশন নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেননি। সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে, দলের মধ্যে নয়। ২৯৯ আসনে ১৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সব দোষ বা দায়দায়িত্ব সবসময় কেবল নির্বাচন কমিশনের উপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সবসময় সব কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।

লিখিত ভাষণের শেষে ‘নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে’ তিনি কিছু প্রস্তাবনা দেন। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বর্তমান ও অতীত থেকে আহৃত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করছি। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয়–ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে, প্রতিটি পর্বের মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিনের বিরতি রেখে, অনুষ্ঠান করা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সহজ ও সহায়ক হতে পারে। আমাদের প্রবর্তিত অনলাইনে নমিনেশন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে।’

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ও মো. আলমগীর উপস্থিত থাকলেও  বেগম রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকলেও মাত্র আড়াই বছরেই বিদায় নিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

২০২২ সালে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের পর সেই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচজন। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। 

এসআরপি/ইভা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়