ঢাকা     শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১

জাতিসংঘ অধিবেশনে ড. ইউনূস

পৃথিবী দেখেছে, বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে একনায়কতন্ত্র রুখে দিয়েছে

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২৩:০২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পৃথিবী দেখেছে, বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে একনায়কতন্ত্র রুখে দিয়েছে

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে, কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণসমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

আরো পড়ুন:

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এর পর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে, কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ছাত্র-জনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যত নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের অদম্য সাহসের ভূয়সী প্রশংসা করে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের এই তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে, তা আমাদের অভিভূত করেছে। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল আমাদের এই তরুণরা।

তিনি আরও বলেন, স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে। তপ্ত রোদ, বৃষ্টি ও মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে তারা সত্য ও ন্যায়সঙ্গত আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘকালব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালনা করার অশুভ ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করেছিল। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানা মতে, আট শতাধিক জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের এই ‘মুনসুন অভ্যুত্থান’ আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

নিউইয়র্ক/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়