পার্বত্য অঞ্চলে পরিস্থিতির উন্নতি
পুলিশ, আনসার ও বিজিবিতে নিয়োগ দেবে সরকার
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
পুলিশ রিফর্মের পাশাপাশি পুলিশ, আনসার ও বিজিবিতে নুতন করে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশ রিফর্মের কাজ চলছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এজন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা একটি রিপোর্ট করবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এখনও দায়িত্বে যোগ দেয়নি, তারা এখন আর পুলিশে নেই। তারা আমাদের কাছে অপরাধী।
পুলিশ বিভাগে নতুন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আজকালের মধ্যে এসআই নিয়োগেরও বিজ্ঞপ্তি যাবে। আমরা আনসার ও বিজিবিতেও নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করছি।
পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আপাতত ভালো। এই পরিস্থিতি যেন বিরাজ করে, সে পদক্ষেপ নিতে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তির পর ইউপিডিএফ কিন্তু হাতিয়ার সমর্পণ করেনি, জেএসএস হাতিয়ার সমর্পণ করেছে। ইউপিডিএফ জেএসএস-এর মধ্যেও ভেতরে ভেতরে ঝামেলা আছে। অন্যান্য নাগরিক যারা আছে, তাদের মধ্যেও ঝামেলা আছে। সবাই যেন মিলেমিশে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। অনেক সময় অস্ত্র এবং ট্রেনিং তারা বাইরে থেকেও পাচ্ছে, সেটা যেন না পায়, আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা জানান, পরিস্থিতি খুব ভালো বলবো না। তবে সন্তোষজনক। এটাকে কীভাবে আরও ভালো করা যায় উপদেষ্টা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। আমি আশা করবো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে উন্নতির দিকে যাবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করি।
বিভিন্ন মাজার দরগায় কীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা যায় সে ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। গার্মেন্টসে অস্থিরতা নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে। এর বাইরেও সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা যেন ছাড়া না পায় সে ব্যাপারেও কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাদক নির্মুলের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, মাদক কিন্তু আমাদের সমাজের জন্য বিরাট অভিশাপ। এটা থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাবো, সেজন্য আপনাদেরও সহযোগিতা দরকার। মাদক আসছে, ধরা হচ্ছে। শুধু বহনকারীদের ধরলে হবে না, গডফাদারদেরও ধরতে হবে।
তিনি বলেন, গডফাদারদের না ধরলে কিন্তু মাদক বন্ধ করা মুশকিল। অনেক সময় দেখা যায়, গডফাদার ধরা পড়লেও তাড়াতাড়ি জামিন পেয়ে যায়। তারা যেন বিচারের আওতায় আসে এবং উপযুক্ত শাস্তি হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পূজার নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পূজা যেন নির্বিঘ্নে হতে পারে, সেজন্য আমাদের যত পদক্ষেপ প্রয়োজন সব নেবো। আমরা আশা করি, অতীতের চেয়ে এবার ভালো পূজা হবে। এ জন্য সবার সাহায্য ও সহযোগিতা আমাদের দরকার।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ২য় সভা সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা এবং কমিটির আহ্বায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুর ১টায় সভা শেষে ব্রিফ করেন দুই উপদেষ্টা। ব্রিফিংয়ের শুরুতেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়াদি ও সিদ্ধান্তের তথ্য জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্ট আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া শ্রমিকদের অস্থিরতা নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন।
সভায় সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে করণীয়; আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায়; পার্বত্য জেলাসমূহে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সশস্ত্র গ্রুপের অপতৎপরতা রোধে করণীয়; সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও জঙ্গি প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ; অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা; বিভিন্ন মাজার-দরগার নিরাপত্তা বিধান; মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; গার্মেন্টস কারখানা, ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা রোধে করণীয়; মায়ানমার সীমান্ত ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নঈমুদ্দীন/তারা