ঢাকা     রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২১ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ ৭ দফা দাবি ‘আমার দেশ’ সম্পাদকের 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৭:৫১, ৬ অক্টোবর ২০২৪

‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দেশে ফিরে পাঁচ দিনের জেলজীবন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় সভা করেছেন। তিনি সাত দিনের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছেন।

রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে মত বিনিময় সভায় তিনি এ দাবি করেন।

তিনি সাত দফা দাবি উত্থাপনকালে বলেন, ‘অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ও বেআইনি সংগঠন ঘোষণা করতে হবে। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের যত সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা ঘটনা ঘটেছে তার জন্য দায়ী একমাত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সারা বাংলাদেশ হাজার হাজার ছেলে-মেয়রকে হত্যা করা হয়েছে, আবু সাঈদ মুগ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী ছিল।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান থেকে আমারদেশ পরিবার, আমার ও সাংবাদিক সমাজের পক্ষ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আগামী এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিচ্ছি, সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে অন্যথায় আমি সাংবাদিক সমাজকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের নামব।’ 

তিনি সাত দফা দাবি উত্থাপনকালে বলেন, ‘একজন বর্ষিয়ান নাগরিক হিসেবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কর্মী হিসেবে আমরা সাত দফা দাবি ঠিক করেছি। যা এই সরকারের কাছে উত্থাপন করছি।

দাবিগুলো হলো-
১. ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসার জন্য অনতিবিলম্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে হবে। সেখানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, মানবাধিকার কর্মী, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের ব্যক্তিগত সচিব মাহফুজ থাকবেন। 

২. ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করতে হবে।

৩. যমুনা সেতুকে শহীদ আবু সাঈদ সেতু নামে ঘোষণা করতে হবে। যেন যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ যখন যমুনা ব্রিজ দিয়ে পার হবে, তখন আবু সাঈদকে ও তার শাহাদাতকে তরুণরা শত শত বছর ধরে স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হতে পারে।

৪. ২০০৯ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যতগুলো চুক্তি হয়েছে তার প্রতিটি ধারা উপধারা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। জনগণকে জানতে হবে ভারতের সঙ্গে কী কী চুক্তি হয়েছে। এগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটিতে দেশপ্রেমিকরা থাকবেন। তবে সেখানে টিআইবি’র ইফতেখারুজ্জামান বা ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতো কোনো ব্যক্তিকে রাখা যাবে না। সেখানে ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় দালাল থাকবে না। 

৫. বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবরার এভিনিউ করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব শুরু হয়েছে শহীদ আবরারের শাহাদাতের মাধ্যমে। শহীদ আবরার ছিলেন ইন্ডিয়ান হেজেমনির বিরুদ্ধে। সেজন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে সৈয়দ আবরার এভিনিউ করতে হবে।

৬. ওয়ার্ল্ড টেনশন থেকে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজে পুতুলের নমিনেশন অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। কারণ, এই সাহেবা পুতুলের নমিনেশন করা হয়েছিল জালিয়াতের মাধ্যমে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানিজেশন পুতুলের নমিনেশন বাতিল করবে কি করবে না সেটা তাদের ব্যাপার কিন্তু বিপ্লব উত্তর সরকারকে পুতুলের নাম প্রত্যাহার করে মেসেজ দিতে হবে ডব্লিউএইচও’কে। 

৭. বুয়েটের ছাত্র, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রহিমকে অবহেলাজনিত হত্যা করা হয়েছে। এটা আমি কারাগারে থাকতে জেনেছি। তিনি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় কারান্তরীণ ছিলেন। যদিও বলা হয় তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। কিন্তু আমি জেনেছি, তার হার্ট হলে আইসিইউতে নেওয়া হলে ইলেক্ট্রিসিটির লাইন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এই সময় তিনি ছটফট করে মারা যান। আর একজন হচ্ছে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু। উনাকেও কারাগারে হত্যা করা হয়েছে বলে জেনেছি। এই দু’জনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। যে কমিটির দায়িত্ব হবে সমস্ত কাগজপত্র প্রমাণ পর্যালোচনা করে এই দুজনের মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা।’

এ সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম স্বৈরাচারীদের নেতা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের আইডল। ফ্যাসিবাদ উত্তর বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদের আইডলের নামে কোনো স্থাপনা থাকতে পারে না। পরিস্কার কথা। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্যাসিট হিসেবেই দেখি। এজন্য যদি কেউ দায়ী থাকে, সে হলো শেখ হাসিনা। ১৬ বছর ধরে তিনি শেখ মুজিবকে সর্বত্র ফ্যাসিবাদের আইডল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’

মাকসুদ/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়