ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ১৩ ১৪৩১

ওয়ার্কশপে দক্ষতা প্রশিক্ষণে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৮ অক্টোবর ২০২৪  
ওয়ার্কশপে দক্ষতা প্রশিক্ষণে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ বেশি

নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছেন প্রদীপ

সুযোগ ও অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান কাজ। শিক্ষার অভাবের পাশাপাশি বাড়তি কোনো দক্ষতাও না থাকায় তারা তেমন কোনো আয়মূলক পেশায়ও নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন না। দেশের আটটি জেলায় কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত তরুণদের আয়ের পথ দেখিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফোক সেন্টারে আয়োজিত এক সভায় সংস্থার পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরেন আইইডির ঊর্ধ্বতন সমন্বয়কারী মো. হামিদুজ্জামান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, সাভার জনউদ্যোগের আহ্বায়ক মাহবুব আলম, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি অনন্ত ধামাই, আদিবাসী ছাত্রনেতা শান্ত সরেন, উন্নয়নকর্মী মাসুম হোসেন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।

আইইডি জানায়, বিকল্প কর্মসংস্থানের ফলে এসব যুব ও যুব নারীদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা, বেড়েছে শিক্ষাগ্রহণের হার। মাসিক সর্বনিম্ন ছয় হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তারা।

পাঁচটি জেলায় মোট ৯৬৭ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে ২০৩ জন আদিবাসী। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী আদিবাসীরা জানান, দক্ষতা অর্জনের ফলে সমাজের মূলস্রোত নাগরিকদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমে এসেছে। পারস্পারিক সম্পর্ক আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে সামাজিক-আর্থিক মর্যাদাও।

মোহাম্মদপুরের ফোক সেন্টারে আইইডির সভা

আইইডির তথ্য বলছে, সরকারি-বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তুলনায় স্থানীয় বাজারে ওয়ার্কশপ বা দোকান থেকে দক্ষতা প্রশিক্ষণের সাফল্য অনেক বেশি এবং স্থানীয় পরিবেশবান্ধব। প্রথাগত প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে ৯০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীই অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগায় না বা ঝরে যায়। কিন্তু সংস্থার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ওয়ার্কশপ বা দোকান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠীর ৯৫ শতাংশই সরাসরি নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আয় করছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে বেকার যুবরা বিশেষ করে আদিবাসীরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করে সংস্থাটি।

বর্তমানে দেশের তিনটি জেলায় আদিবাসীদের নিয়ে তাদের এই মডেল প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

আগ্রহী তরুণদের খুঁজে বের করে আইইডি স্থানীয় বাজার এবং ওয়ার্কশপে ১০ মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়। প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে যাতায়াত ও খাওয়া খরচ বাবদ দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা।

তাদেরই একজন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রদীপ হাঁসদা। পারিবারিক অভাব-অনটনে অষ্টম শ্রেণিতেই থেমে যায় পড়াশোনা। বেকার প্রদীপ আইইডির কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের খবর পেয়ে অটোমোবাইল রিপেয়ারিং ট্রেডে আবেদন করেন। গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী এলাকার টিটো ওয়ার্কশপে ১০ মাসের ট্রেনিং শেষে সেখানেই কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

কিছুদিন পর বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গোপালপুর মোড়ে নিজেই গড়ে তোলেন ‘প্রদীপ মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টার’। উদ্যমী প্রদীপ এখন মোটরসাইকেল মেরামতে এলাকায় পরিচিত নাম। মাসে তার আয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। নিজের বেকারত্ব ঘুচিয়ে আরও বোধিনাথ সরেন ও বিশ্বজিৎ ওঁরাও নামে দুইজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ বার্তার সম্পাদক উজ্জ্বল বলেন, এটি একটি সুন্দর পদ্ধতি। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে পড়া সম্ভব। ছোট পরিসরে আইইডি কাজ করছে। কিন্তু এটিকে বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। সরকারও এক্ষেত্রে অর্থায়ন করতে পারে।

মাহবুবুল আলম মনে করেন, এ ধরনের প্রকল্পে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করা যেতে পারে। আগ্রহী ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হলে ফলাফলও ভালো হয়।

/এনএইচ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়