বাংলাদেশ থেকে আরো রোহিঙ্গা নেবে অস্ট্রেলিয়া: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে আরো রোহিঙ্গা নেবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।
বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে আমরা রোহিঙ্গাদের অস্ট্রেলিয়ায় নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছি। তারা আগেও ২ হাজার রোহিঙ্গা নিয়েছে, আরো নেবে। এ ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সম্মতি জানিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবৈধভাবে যে ৯৭ জন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন ও যাদের বৈধ ভিসা ছিল না, তাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা দেশে ফেরত নিয়ে আসব। তারা অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি। পাশের একটা দ্বীপে তাদের রাখা হয়েছে। তাদের খাওয়া-দাওয়ায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের জনগণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতা, সিভিল মেরিটাইম সিকিউরিটি এবং মেরিটাইম সেফটি বিষয়ে সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধ বিষয়ে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। দুই দেশের পুরনো বন্ধুত্ব কমনওয়েলথ ঐতিহ্য এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরো দৃঢ় হয়েছে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক উইলিয়াম ওডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি নাগরিক, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ খেতাবে ‘বীর প্রতীক’-এ ভূষিত হয়েছেন।
বৈঠকে উপদেষ্টা জানান, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচারসহ আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকি প্রতিরোধে বাংলাদেশ সর্বদা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এ বিষয়ে তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতা জোরদার ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন দৃষ্টি ও আগ্রহ রয়েছে।
এ সময় অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ নানা ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে আছে। তরুণ প্রজন্ম অনলাইন ও বিভিন্ন মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াও সাইবার হামলাসহ এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ‘সিভিল ম্যারিটাইম অ্যান্ড ম্যারিটাইম সেফটি’ শীর্ষক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অস্ট্রেলিয়ান মেরিটিটাইম বর্ডার কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ব্রেট সনটার।
মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্দিয়া সিম্পশন, মন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ ড্যারিল ওয়াটকিনস, মন্ত্রীর সিনিয়র অ্যাডভাইজার অ্যান ক্লার্ক, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ইমিগ্রেশনবিষয়ক সহযোগী সচিব এমা কাসার, অস্ট্রেলিয়ান মেরিটিটাইম বর্ডার কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ব্রেট সনটার, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক (নয়াদিল্লিস্থ হাইকমিশনে সংযুক্ত) স্টিভ বিডল, বাংলাদেশবিষয়ক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল জন ডেম্পসি, নয়াদিল্লিস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক কাউন্সিলর জেড ডনি ও অস্ট্রেলিয়ান বর্ডার ফোর্স-বিষয়ক কাউন্সিলর সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্লেইজ টেইলর।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরে আলম।
নঈমুদ্দীন/রফিক