দুর্নীতিবাজ নেতারা সক্রিয় সচিবালয়ে, সংযুক্ত পরিষদের ৯ দফা
ফাইল ছবি/সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর সচিবালয় কর্মচারী পরিষদের নেতারা বিভিন্ন নামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা আগের মতো সচিবালয়ে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এমন অপকর্ম অপতৎপরতায় সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, সচিবালয়ে পতিত সরকারের দোসর কর্মচারী পরিষদের দুর্নীতিবাজরা এখনও সক্রিয়। তারা আগের মতোই বিভিন্ন নামে ভুল পাল্টিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষায় কাজ করছেন।আগের মতো প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি গোপনে এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন ওই কর্মচারী।
এদিকে, ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একমাত্র সংগঠন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ বিগত সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত-সাময়িক বরখাস্ত ও অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্তদের মতো পাওনা ফেরত, বিভিন্ন ক্যাটাগরির পদ সংরক্ষণ, পদনাম পরিবর্তন, নতুন পে-কমিশন গঠনসহ নয় দফা দাবি দিয়েছে সরকারকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (৩ নভেম্বর) সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সচিবালয়ে কর্মরত ননক্যাডার ফিডার পদধারীদের প্রাপ্যতানুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির পদ সংরক্ষণ, পদনাম পরিবর্তন, নতুন পে-কমিশন গঠন, ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা, ১০০% পেনশন ও ৪০০% গ্রাচুইটি সুবিধা প্রদান, বিদ্যমান ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে ১০টি গ্রেড প্রবর্তন, সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির বিদ্যমান পদ ও নাম পরিবর্তন করে যৌক্তিক নাম প্রদান, বিগত সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত-সাময়িক বরখাস্ত ও অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্তদের মতো পাওনা ফেরতসহ যৌক্তিক নয় দফা দাবি দাওয়া আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তিনি আরও জানান, আমাদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি দুই মন্ত্রণালয় আমাদের দাবি দাওয়া দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর সংযুক্ত পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বদিউল কবির ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের হাতে লিখিত দাবি তুলে দেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব নেতাদের সরকারের গঠিত পে-কমিশনে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে পত্রের মাধ্যমে যথা সময়ে জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন সচিব।
নয় দফা দাবি দাওয়া ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবদনে বলা হয়, সব সরকারি কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে এ সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর বাধা প্রদান এবং দমন-পীড়নসহ নেতাদেরকে হয়রানি, সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত এবং বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মাধ্যমে সচিবালয় থেকে বিতাড়ন করা হয়। বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মচারীদের ন্যায় এ পরিষদের ১৩ জন কর্মচারী প্রত্যক্ষভাবে উক্ত শ্রেণির নিগ্রহের শিকার হয়ে অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। অন্যদিকে সচিবালয় অঙ্গনে সুবিধাভোগী নতুন কিছু সংগঠন সৃষ্টি হয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব ধ্বংস করা হয়। ফলশ্রুতিতে, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে সব স্তরের কর্মচারীরা চাকরির ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্য পদোন্নতি ও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েন বলেও জানানো হয়।
এ সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পরিষদের সাবেক মহাসচিব ও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা মো. তোয়াহা উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে ৯ দফা দাবি পেশ পরবর্তী যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতারা জরুরি সভায় মিলিত হন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর।
/নঈমুদ্দীন/সাইফ/