কৃষি খাত
এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সার ক্রয়ে ব্যয় ৪৬ কোটি টাকা
রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় কাফকোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পৃথক ৪টি প্রস্তাবের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সার ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৫৪৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, দেশের কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য পৃথক চারটি ক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার আমদানি করবে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় মরক্কো থেকে ৮ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি, শিল্প মন্ত্রণালয় ষষ্ঠ লটে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার, সৌদি আরব থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করার উদ্যোগ নিয়েছে।
ফসল উৎপাদনে টিএসপি সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। দেশের কৃষি উৎপাদনে টিএসপি সারের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বিএডিসির মাধ্যমে মরক্কোর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওসিপি নিউট্রিক্রাপস থেকে রাষ্ট্রী চুক্তির আওতায় ২০২৮-২০০৯ অর্থবছরে থেকে টিএসপি সার আমদানি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা মজুতসহ বাংলাদেশে টিএসপি সারের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিএডিসি রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পিএসপি সার সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া বিসিআইসি প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার উৎপাদন করে থাকে। চাহিদার অবশিষ্ট প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন সার বেসরকারি পর্যায়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বিএডিসিতে নিরাপত্তা মজুত হিসেবে ২ লাখ মেট্রিক টন টিএসপি সার মজুত রাখতে হয়। টিএসপি সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সারের আন্তর্জাতিক দর নির্ণয় পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সারের দাম পড়বে ৪১৫ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে মরক্কো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কেম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সারের পরিমান ৩ লাখ মেট্রিক টন এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অপশনাল ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টনসহ ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। সৌদি আরব থেকে জি টু জি চুক্তির আওতায় ২০০৭ সাল থেকে ইউরিয়া সার আমদানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর চুক্তি স্বাক্ষর করে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। সৌদি আরবের সাবিহ থেকে ষষ্ঠ লটে প্রতি মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ৩৮২.৬৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।
এছাড়া ৭ম লটে সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৭০.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৭ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৭ম লটে ৩ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সংগ্রহ পরিকল্পনায় কাফকো থেকে ইউরিয়া সার ক্রয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাসভিত্তিক চহিদা, বিসিআইসির গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা সীমাবদ্ধতা এবং কাফকোর মাসভিত্তিক উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় ৫ লাখ ৪০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ১৮টি লটে ক্রয় করা হবে। কাফকো, বাংলাদেশ সরকারের একটি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০০২ সাল থেকে সম্পাদিত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি এবং পরবর্তীতে ২০০৫ সালের সংশোধনী চুক্তির আওতায় ইউরিয়া সার ক্রয় করা হচ্ছে। কাফকোর সঙ্গে সম্পাদিত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি এবং সংশোধনী চুক্তিতে মূল্য নির্ধারণী ফর্মুলা রয়েছে। সেই ফর্মুলা অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের দাম ৩৫০.৭৫ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ