ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

৪৩ বছর পর দিল্লির ‘সেই এলাকায়’ শেখ হাসিনার ১০০ দিন!

কূটনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪  
৪৩ বছর পর দিল্লির ‘সেই এলাকায়’ শেখ হাসিনার ১০০ দিন!

শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) শেখ হাসিনার ভারতে ১০০ দিন আশ্রয়ে থাকার ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম দিয়েছে ‘গোপনীয়তার মধ্যে শেখ হাসিনার ভারতে ১০০ দিন: আমরা যা জানি’।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার শততম দিন পেরিয়েছে ৫ নভেম্বর। ৫ আগস্ট তিনি দিল্লির হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছিলেন এবং সেখানে কয়েক দিন ছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো বিবিসিও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দুটি প্রতিবেদনেই প্রায় ১০০ দিন দিল্লিতে শেখ হাসিনার ‘নিরাপদ আবাসনে’ লোকচক্ষুর অন্তরালে বসবাসের কথা উঠে এসেছে। 
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতে ‘সুরক্ষিত’ অথচ ‘গোপন’ অতিথিশালায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। তবে, সেটি হিন্ডন বিমানঘাঁটি নয়। 

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি শেখ হাসিনার কণ্ঠসদৃশ্য অডিওর কয়েকটি ক্লিপ ফাঁস হয়েছে, যার সারসংক্ষেপকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উস্কানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান বলেছেন, “তাকে (শেখ হাসিনা) বক্তব্য-বিবৃতি থেকে বিরত রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।”  

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানিয়ে তৌফিক হাসান বলেন, “ভারতে বসে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতির কারণে দেশটির কাছে একাধিকবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার ও দেশটির সরকারকে জানানো হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাওয়ার পর যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তা ভালো চোখে দেখছে না বাংলাদেশ।

দুই দেশের ‘ঐতিহাসিক সম্পর্কের জন্য’ তাকে এই ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত রাখা জরুরি বলেও প্রতিবেশীদের জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৌফিক হাসান।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। পর ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে, যা খবরের শিরোনাম হয়ে এসেছে। 

শেখ হাসিনার ভারত থেকে অন্য দেশে যাওয়ার গুঞ্জন, দিল্লির সুরক্ষিত আবাসনে থাকা, তার বক্তব্য-বিবৃতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সময়ে সময়ে বক্তব্য-মন্তব্য পাওয়া গেছে। 
অবশ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় তাকে ধরে এনে দিতে ইন্টারপোলের কাছে চিঠি পাঠালেও নীরব রয়েছে দিল্লি। 

আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, চিঠি পেয়ে ইন্টারপোল যদি রেড অ্যালার্ট জারি করে এবং তখন সরকার চাইলে ভারতের সঙ্গে কথা বলবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে উচ্চ-নিরাপত্তা এলাকায় একটি বাংলোতে রয়েছেন, যা মূলত ‘সেইফহাউজ’, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিখুঁত।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ৪৯ বছর আগে যখন শেখ হাসিনা ও তার বোন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এখনকার মতো তখনও তারা দিল্লির এই এলাকায় ছিলেন।

বিবিসির খবরে শেখ হাসিনার ঠিকানার বর্ণনা এসেছে এভাবে: দিল্লির কেন্দ্রস্থলকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে যে ইনার রিং রোড, তার ঠিক ওপরেই চারতলা পেল্লায় বাড়িটা। ডাক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী ঠিকানা ৫৬ রিং রোড, লাজপত নগর, দিল্লি ১১০০২৪।

বিবিসির বর্ণনা অনুযায়ী, দিল্লির দক্ষিণপ্রান্তে পাঞ্জাবি অধ্যুষিত ওই এলাকায় এই বাড়িটার আলাদা করে কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু, আসলে কতজনই বা জানেন, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার ঠিকানা ছিল রিং রোডের ওপরে এই ভবনটাই?

আসলে তখন ৫৬ রিং রোড ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ‘সেইফ হাউজ’ বা গোপন অতিথিশালা। শেখ মুজিব আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন তার কন্যাকে সপরিবার ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রথমে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল এই বাড়িতেই।
পরে একাধিকবার হাতবদল হয়ে ওই ভবনটি এখন শহরের একটি ছিমছাম চার তারকা হোটেলে রূপ নিয়েছে। নাম ‘হোটেল ডিপ্লোম্যাট রেসিডেন্স’।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় অভ্যুত্থানকারী সেনা কর্মকর্তাদের বুলেট থেকে রক্ষা পান।

শেখ হাসিনা, তার সন্তান, স্বামী ও বোনসহ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছয় বছর ধরে দিল্লির পান্ডারা রোডে বসবাস করেছিলেন। ভারত থেকে দেশে ফেরার ৪৩ বছর পর আবার বিতাড়িত হয়ে সেই দিল্লিতেই আশ্রয় হয়েছে তার।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির লাজপত নগরের ৫৬ রিং রোডের একটি অত্যাধুনিক রেসিডেন্সে শেখ হাসিনাকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। 

অবশ্য, এই ঠিকানায় শেখ হাসিনা বা তার পরিবার খুব বেশি দিন ছিলেন না। তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল দিল্লির কেন্দ্রস্থলে অভিজাত পান্ডারা রোডের একটি সরকারি ফ্ল্যাটে, যার বাইরে ঝোলানো থাকত ভিন্ন নামের নেমপ্লেট। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর সেখানেই ছিলেন তারা। 

লাজপত নগরের সেই ভবনে এসে ওঠার ঠিক ৪৯ বছর বাদে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আরও একবার ভারতে এসে আশ্রয় নিলেন, তখনও কিন্তু শহরে তার প্রথম ঠিকানায় তিনি থিতু হননি।

আগস্টের ৫ তারিখে চরম নাটকীয় পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যখন ভারতে পা রাখেন, দিল্লির বিশ্বাস ছিল, তার এই আসাটা একেবারেই সাময়িক- ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে যাওয়ার আগে এটা একটা সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির বেশি কিছু নয়!

বিবিসি লিখেছে, যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশে তিনি রওনা হয়ে যাবেন, এই ধারণা থেকেই প্রথম দু’-চার দিন তাকে (ও সঙ্গে বোন শেখ রেহানাকে) রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর।

বিবিসি লিখেছে, শেখ হাসিনার চট করে তৃতীয় কেনো দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির এক গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়তে দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনো সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এই ব্যাপারে ভারত সরকার আজ পর্যন্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।

শেখ হাসিনার অবস্থান ও নিরাপত্তা নিয়ে অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে মাঝে-মধ্যে খবর প্রকাশ করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

তবে, তাকে ঠিক কেমন নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, কেমন আবাসনে রাখা হয়েছে; তা পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি এই ‘চরম অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীনভাবে কতটা কী করতে পারছেন কিংবা আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে ভারত তাকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করছে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়ে গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৌহিদ হাসান বৃহস্পতিবার যেটি বলেছেন, শেখ হাসিনা যেন বক্তব্য-বিবৃতি না দেন, সেজন্য ভারতে বারবার বলা হয়েছে। ভারত সরকার কি তাকে সেই মতো নিষেধের বিষয়টি জানাচ্ছে? 

শেখ হাসিনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন কেমন?
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি পদমর্যাদা ও নিরাপত্তাগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতের ভিভিআইপি-রা বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন, যার মধ্যে ‘জেড প্লাস প্লাস’ ক্যাটাগরিকেই সর্বোচ্চ স্তর বলে ধরা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অবশ্য সম্পূর্ণ আলাদা মানদণ্ডে আয়োজন করা হয়। ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ বা এসপিজি কমান্ডোরা সাধারণত বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এই নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলে থাকেন। তবে, যে ভিভিআইপি-দের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ধরনও হয় আলাদা।

ভারতে শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত এমন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, “বেয়ার মিনিমাম, প্লেইন ক্লোদস, নো প্যারাফারনেলিয়া!” যার অর্থ হলো, “যেটুকু নাহলে নয়, শেখ হাসিনাকে সেটুকু নিরাপত্তাই দেওয়া হয়েছে, সাদা পোশাকের রক্ষীরাই তার চারপাশে ঘিরে রয়েছেন, আর গোটা বিষয়টার মধ্যে কোনো আতিশয্য নেই।”

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ইন হার কেস, সিক্রেসি ইজ দ্য সিকিওরিটি!” অর্থাৎ তার বেলায় গোপনীয়তাই হলো নিরাপত্তা! 

এটারও অর্থ খুব সহজ- শেখ হাসিনার অবস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষার ওপর। কারণ, তিনি কোথায় কীভাবে আছেন, এটা যত গোপন রাখা সম্ভব হবে, ততই তার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা সহজ হবে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস- অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল!”

ফলে, ওই কর্মকর্তা তার তৃতীয় বাক্যে বলছেন, শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সঙ্গে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা- এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল।

ওই কর্মকর্তার কথা থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা খুব বিশেষ এক ধরনের আয়োজন– মানে ধরা যেতে পারে, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা থাকে, তার সঙ্গে সেটা মাত্রায় তুলনীয় হলেও আয়োজনে একেবারেই অন্য রকম!

বিবিসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দিল্লির মর্নিং ওয়াকারদের স্বর্গ লোদি গার্ডেনে তিনি এসে মাঝেমাঝে হাঁটাহাঁটি করে যাচ্ছেন কিংবা ইচ্ছে করলে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যায় কাওয়ালি শুনে আসছেন— এই ধরনের যাবতীয় জল্পনা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তারা।

সেই সঙ্গেই তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে, এর অর্থ হলো তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বও কিন্তু এখন ভারতেরই কাঁধে। সেখানে সামান্য কোনো ভুল হলেও তার দায় ভারতের কাঁধেই আসবে এবং সেটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর হবে।

ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০০ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পুরনো পরিচিত দিল্লির ঘনিষ্ঠজনদের কেউ কেউ তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছেন।

৪৯ বছর আগের সেই দিল্লিতে বসবাস করার সময় যারা শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছিলেন, পরে তিনি সরকারে থাকা অবস্থায় ভারতীয় যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্য হয়েছিল, তাদের সঙ্গে সীমিত পরিসরে যোগাযোগ হওয়ার তথ্য দিচ্ছে টাইমস অব ইন্ডিয়াও। 

শেখ হাসিনা কি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন?
১০০ দিনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপে একপ্রান্তের কণ্ঠস্বর হুবহু শেখ হাসিনার মতোই শোনা গেছে।

এ নিয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, দিল্লির নর্থ ব্লকের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করেছে বিবিসি। 

ওই কর্মকর্তা বলছেন, “আমি জানি না, এটা এআই দিয়ে বানানো হয়েছে নাকি শেখ হাসিনার নিজেরই কণ্ঠ। তবে, তার তো পরিচিতদের সঙ্গে কথাবার্তা বলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই। এখন কেউ যদি সেই আলাপ রেকর্ড করে লিক করে দেয়, তাতে আমাদের কী করার আছে?”

লন্ডনের দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে প্রথম মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিরা বলেছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সরকারের একটি সেইফ হাউজে আছেন।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ক লোধি গার্ডেনের চারপাশে পরিচিতজনদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

অবশ্য বিবিসির প্রতিবেদনে এই সম্ভাবনার কথা সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

যদিও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে ছিলেন, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) কাজ করেন। পুতুল ডাব্লুএইচও’র দিল্লি সদর দপ্তরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক, তিনি ফেব্রুয়ারিতে এ চাকরিতে যোগ দেন।

শেখ হাসিনার সরকার পড়ে গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন পুতুন।

নরেন্দ্র মোদি সরকার দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীসহ সর্বদলীয় বৈঠকে এবং পার্লামেন্টে শেখ হাসিনার ভারতে ‘সাময়িক অবস্থান’ বিষয়ে ব্রিফ করলেও পরে তার দীর্ঘমেয়াদে থাকা না-থাকা নিয়ে আর কোনো প্রকাশ্য বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি।

ঢাকা/রাসেল/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়