ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৫ ১৪৩১

আইন উপদেষ্টা 

গণআন্দোলন দমনে দায়ের করা প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৯, ১৯ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২০:১০, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
গণআন্দোলন দমনে দায়ের করা প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল

গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনের লক্ষ্যে দায়ের করা প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

এ সময় আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।

ড. আসিফ নজরুল জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলক্রমে কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৪ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত হলে ওই আইনের অধীনে দায়ের করা সব স্পিচ-অফেন্সের মামলা প্রত্যাহার করা হবে, উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই আইন প্রত্যাহারে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছি। তবে, হ্যাকিং বা কম্পিউটার অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো চলমান থাকবে।’’

আইন উপদেষ্টা জানান, এই কয়েক দিনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৬১ জেলায় ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘এত বেশি সংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশে এর আগে ঘটেনি। এর মাধ্যমে সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে। এখন যে ঢালাও মামলা হচ্ছে, মামলা বাণিজ্য করা হচ্ছে; তাও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’’ 

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘যারা মামলা বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তিনি জানান, এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন সহায়তা করেছে আইন মন্ত্রণালয়। চিফ প্রসিকিউটরসহ ১১ জন প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। তাছাড়া, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন আইন কর্মকর্তা তথা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে রোম স্ট্যাটিউট এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। এই আইন সংশোধনী অধ্যাদেশ বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে বলেও জানান তিনি । উপদেষ্টা বলেন, ‘‘অধ্যাদেশটি পাস হলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, নতুন আইনের মাধ্যমেই পরবর্তী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।’’

‘‘অধস্তন আদালতের বিচারক, রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব সংগ্রহ করা হয়েছে। এই হিসাব বিবরণী এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’’ 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন  অধ্যাদেশ হচ্ছে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘একটা-দুটো দিন অপেক্ষা করেন। আর সংশোধনীটা তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের প্রস্তাবনায় যেটা আছে, সেখানে আদালতকে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তবে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে তারা এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কনসার্ন অথরিটির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’’

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এবং জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশসহ মোট ১০টি অধ্যাদেশ প্রণয়ণে ভেটিং সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৯৫টি প্রজ্ঞাপন, ৩৩টি বৈদেশিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ভেটিং করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তদন্ত কমিশন গঠনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছে। উক্ত কমিশনকেও আইন মন্ত্রণালয় সাচিবিক সহায়তা করেছে।’’

‘‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এ কমিশন গত ১২ নভেম্বর আমার সঙ্গে বৈঠক করেছে। আশা করছি, কমিশন বিচার বিভাগের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব দ্রুতই প্রস্তুত করবে, ‘’ বলেন আসিফ নজরুল। 

প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন, সেখানে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু চেষ্টার ঘাটতি নেই, দাবি করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলোকে সকল প্রকারের সাচিবিক সহায়তা করা হচ্ছে।’’

সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘‘ভালো একটা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অনেক উপদেষ্টা আগের পেশায় ফিরে যেতে চান।’’  

প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘দেশে কোনো আসামিকে না পেলে রেড এলার্ট জারির আবেদন করতেই পারি। বাংলাদেশ ইন্টাপোলের সদস্য।’’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে  পালিয়েছেন। নিজে পালানোর তিন দিন আগে স্বজনদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তাকে প্রশ্ন করা উচিত, তাদের ফেলে রেখে কেন পালিয়েছেন তিনি?’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সরকার আওয়ামী লীগের মতো দমন-পীড়ন চায় না। অযৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকার বিষয়গুলো দেখছে। কঠোর হলে সরকার ভালোভাবেই কঠোর হবে।’’

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়