উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের বার্তা
শান্ত থাকুন, সংখ্যালঘুদের নিরাপদে রাখুন
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তার অনুসারীরা। মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে।
হিন্দু ধর্মীয় নেতাকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের তরফ থেকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপরও জোর দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে সংঘর্ষের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই আহ্বান জানান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পেরিয়ে আসার পর এখন পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ, নানা ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।
পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভের পর ব্যাটারি রিকশাচালকদের অবরোধ এবং কলেজে কলেজে সংঘর্ষ, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় মানুষ জড়ো করা নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়ার কথা উপদেষ্টাদের মুখ দিয়েই এসেছিল।
তার মধ্যেই সোমবার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র, চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে।
তাকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে চিন্ময়ের অনুসারীরা। তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে এক আইনজীবী নিহত হন।
এই অবস্থায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশঙ্কা থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ শান্ত থাকার বার্তা দেন ফেসবুকে।
মাহফুজ লিখেছেন, “গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে শান্ত থাকুন। নিরীহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”
সরকার দ্রুতই সব রাষ্ট্রদ্রোহী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
দুদিন আগেই মাহফুজ ফেসবুক পোস্টে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, “অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়।
“আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করব সবাইকে নিয়ে এগোনোর। কিন্তু হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
চট্টগ্রামের সংঘাতের পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কোনো ধরনের উসকানিতে কাউকে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “রাষ্ট্রদ্রোহ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সকলকে ধৈর্য ধারণ করার এবং কোনও প্রকার উস্কানিতে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান রইল।”
একই আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, “আপনারা ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন। নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়ে দয়া করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না।
“চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে, বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কোন নির্দিষ্ট সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে সে সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আপনারা শান্ত থাকুন, সতর্ক থাকুন, ধৈর্য ধরুন।”
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকেই একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য ক্রমাগত চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। দয়া করে নিজেরা নিজেরা কোন্দলে জড়িয়ে কুচক্রী এই মহলের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে দিয়েন না।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর যে কোনও চেষ্টা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “ধর্মকে টুল হিসেবে ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সন্ত্রাসী সংগঠন যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করে, তবে সেসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
“যেই জড়িত থাকুক না কেন, খুনের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ষড়যন্ত্রকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয়। বেশি ছাড় পেলে মাথায় উঠে নাচবে। উগ্রপন্থীর বিচার তার ধর্ম দেখে হয় না, উগ্রপন্থীতা দেখে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “দেশের সার্বিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক হওয়ার আহ্বান থাকল।’’
“আমার প্রাণের শহর চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসমূহকে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।”
ঢাকা/এনএইচ