বিশৃঙ্খলা রুখতে ঐক্যে জোর সরকার ও বিএনপির
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করে।
দেশের বিশৃঙ্খলা রুখে স্থিতিশীলতার স্বার্থে ‘জাতীয় ঐক্যের’ আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। একই সুর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কণ্ঠেও। দলটিও বলছে, বিভাজনের পথ এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির কথা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তারা প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বুধবার সন্ধ্যায় ব্রিফ করেন
বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘‘মিটিংয়ের মূল ম্যাসেজ হচ্ছে, আমাদের নিয়ে…একটা ক্যাম্পিং হচ্ছে, অপপ্রচার হচ্ছে। সেই বিষয়ে আজকের মিটিংয়ে বিএনপির তরফ থেকেও একটা ন্যাশনাল ইউনিটির কথা বলা হয়েছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, উনিও এই ন্যাশনাল ইউনিটির কথা বলেছেন। জাতির স্থিতিশীলতার জন্য প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। সেটা ছাত্র-জনতা, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টার সবার কাছে উনি জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন।’’
এদিকে, বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিবও সাংবাদিকদের কাছে ঐক্যের বার্তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘উদ্ভূত পরিস্থিতে, বিশেষ করে কয়েক দিন ধরে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ছাত্রদের সমস্যা—এগুলো নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আমরা উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। এসব বিষয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছি। সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার কথাও বলেছি। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা তার পরিষদ নিয়ে অতি দ্রুত উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করবেন।’’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘ইসকন’ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ ওঠে। তাকে গ্রেপ্তারের কারণও তারা জানতে চান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দল ও সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি তুলেছে, এর সঙ্গে বিএনপি দ্বিমত জানিয়েছে; বরং তারা ইসকনকে আলোচনায় ডেকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। বিশেষ করে দুটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, বিভাজন সৃষ্টি ও বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছে বিএনপি।
বৈঠকে চট্টগ্রামে ইসকনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই একই জিনিস সবাই ন্যাশনাল ইউনিটির কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে শান্তির বার্তা দিয়েছেন, সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন।’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ থেকে যেটা পেয়েছি যে, সেখানে মোট ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন হচ্ছে যাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের সাসপেক্ট হিসেবে ধরা হচ্ছে। আর ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ভেন্ডালিজমে, পুলিশের সাথে মারামারি করার কারণে ধরা হয়েছে। আর ছয়জনকে ধরা হয়েছে তারা আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য। তারা ককটেলসহ ধরা পড়েছে।”
সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বের হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘জনগণের যে দুর্ভোগের কারণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, টিসিবির এলাকা ও ট্রাক বাড়ানো, সড়কে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করা; কৃষকের সার বিতরণে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বাদ দেওয়া, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতন নির্বিঘ্ন করা, ইউনিয়ন পরিষদগুলো ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে করা রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়। এরই অংশ হিসেবে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সরকারের তিন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ