শিল্প সম্পর্কের সমন্বয় সাধনে ত্রিপক্ষীয় ঘোষণাপত্র সই
বাংলাদেশ সরকার, মালিক সংগঠন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন এবং শ্রমিক সংগঠন ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) যৌথভাবে “বাংলাদেশে উন্নত এবং সমন্বয়পূর্ণ জাতীয় শিল্প সম্পর্ক” বিষয়ে একটি ঘোষণাপত্র সই করেছে।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে শিল্প সম্পর্কের পরিবর্তনের বিষয়ক এক জাতীয় সংলাপে অঙ্গীকারের কথা জানানো হয়।
শিল্প খাতের কর্মক্ষেত্রে স্থিতিশীল এবং ন্যায়সঙ্গত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই অঙ্গীকার বা ঘোষণাপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এই ঘোষণাপত্র দেশের শিল্প খাত এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রধান এই ত্রিপক্ষীয় অংশীদাররা সামাজিক ন্যায়বিচারে সুদৃঢ় ভিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শিল্প সম্পর্ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেয়।
জাতীয় এই সংলাপে জানানো হয়, এই ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে সমন্বয়পূর্ণ সম্পর্ক বাস্তবায়নের পাশাপাশি একটি স্থিতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করা। যা টেকসই এবং সহনশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শিল্প খাতে চলমান অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে স্থান পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের কিছু খাতে সম্প্রতি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই অবস্থায় ঘোষণাটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশে কার্যকর ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন' ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিকল্প বিরোধনিষ্পত্তি প্রক্রিয়াসহ একটি আধুনিক এবং ঐক্যবদ্ধ বিরোধ-প্রতিরোধ এবং সমাধান কাঠামো অপরিহার্য। এই ঘোষণাটি সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করে আরও ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই শিল্প সম্পর্কের দিকে দেশের যাত্রার পথ সুগম করবে।
সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ শ্রমিক সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ককে সমর্থন করলেও, কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী, নিজেদের শ্রমিক পরিচয় দিয়ে, সংলাপ এবং আলোচনাকে উপেক্ষা করে সহিংসতা এবং শারীরিক আক্রমণের আশ্রয় নিয়ে এই খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সরকার এবং সামাজিক অংশীদারদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।
সভায় আইএলও এর গভর্নেন্স, রাইটস এবং ডায়লগের সহকারী মহাপরিচালক ম্যানুয়েলা টোমেই বলেন,‘‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক আলাপের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শিল্প সম্পর্ক-উন্নত কর্মসংস্থানের শর্ত, উন্নত কর্মপরিবেশ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পথ প্রশস্ত করে। এটি একটি স্থিতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য অপরিহার্য।’’
ঘোষণাপত্রে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই ধরনের ব্যবস্থা সর্বোত্তমভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যার মূলস্তম্ভ হচ্ছে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, সমষ্টিগত আলোচনার অধিকার এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ।’’
ঘোষণায় সামাজিক সংলাপ ব্যবস্থা উন্নত করতে এবং বিরোধ প্রতিরোধ ও সমাধানের অধিকতর কার্যকর ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার তার সামাজিক অংশীদারদের সবসময় গুরুত্ব দেয়। তাদের সহযোগিতায় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটিগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে।’’
তিনি বলেন,‘‘আজকের ঘোষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক শ্রম মান, বিশেষ করে, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ কনভেনশন, ১৯৭৬ (নং ১৪৪) এবং সমস্ত স্তরে সামাজিক সংলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’’
বিইএফ সভাপতি আরদাশীর কবির সামাজিক সংলাপ প্রচারে মালিকদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন ত্রিপক্ষীয়তার বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে নিবেদিত এবং কালেকটিভ বার্গেইনিং প্রক্রিয়া প্রচারে সরকারি প্রচেষ্টাকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করবে।’’
ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসিডব্লিউই) চেয়ারপারসন বাদল খান বলেন, ‘‘ত্রিপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় সামাজিক সংলাপ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকের কার্যকর ভূমিকা সমর্থন করতে এবং এই জাতীয় প্রক্রিয়াগুলির কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য পদক্ষেপগুলো শনাক্তকরণ এবং সমর্থন করার জন্য ট্রেড ইউনিয়নসমূহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
ঢাকা/হাসান/সাইফ