ভারতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন
সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এনে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয়ে হামলা, বেনাপোল বন্দরের ওপারে পেট্রাপোলে অবস্থান কর্মসূচি, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ঘিরে কূটনৈতিক বার্তা চালাচালির মধ্যে ভারতবিরোধী কর্মসূচিরও ডাক এসেছে দেশে।
উভয় দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা পরিহারের আহ্বান এলেও ভারতের বিভিন্ন দল ও সংগঠনের বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকরা।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ‘অপপ্রচার ও গুজব’ রটানোকে দায়ী করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষোভও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে ‘অভিন্ন স্বার্থ’ থাকায় সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন উপদেষ্টারা।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকা অবমাননা
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে হামলার এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি'র সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশন কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে যায়। এ সময় বাইরে থাকা কয়েক যুবক হঠাৎ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে। তারা হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, গেরুয়া পতাকা এবং পট্টিধারী কিছু লোক বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ঢুকছে। তারা ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে এবং হাইকমিশন চত্বর থেকে বের করে দেয়। ঘটনাস্থলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএফএফ) সদস্যদেরও দেখা যায়।
ভারতের দুঃখ প্রকাশ
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবারের এই হামলার ঘটনায় এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
এতে আরও বলা হয়, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি বা সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এর আগে সোমবার দুপুরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ছড়ানো গুজবের জেরে আগতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানো হয় বলে কলকাতা টোয়েন্টি ফোর সেভেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে বলা হয়, হিন্দুত্ববাদীরা এ হামলা চালিয়েছে।
ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তে ভারতীয়দের বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ, বিজিবির প্রতিবাদ
ফেনীর সীমান্তবর্তী পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভারত অংশে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সনাতনী হিন্দু সমাজের ব্যানারে কিছু ভারতীয় নাগরিক রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিক্ষোভ করেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি ৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
বিলোনিয়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে স্লোগান দেওয়ার বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’’
বিজিবির মজুমদারহাট বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সৈয়দ কামরুল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ঘটনার পর বিলোনিয়া স্থলবন্দরে বিজিবির সদস্যরা অবস্থান নেন। বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডারকে ডেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’’
বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিজিবির পক্ষ থেকে প্রথমে মৌখিক ও পরে লিখিতভাবে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে বিএসএফ সচেষ্ট রয়েছে বলে বিজিবিকে আশ্বস্ত করেছে।’’
মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপকমিশনের সামনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিক্ষোভ
ভারতের পশ্চিম উপকূলের রাষ্ট্র মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কয়েকশ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাংলাদেশ মিশনের প্রায় এক থেকে দেড়শ গজের মধ্যে এসে অবস্থান নেন। তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসকন সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের দূতালয় প্রধান মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়নের ‘প্রস্তাব’ মমতার
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ও হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভা অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সময় এ কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দেশটির সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তাব দিলাম। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বিবৃতি দিন। রাষ্ট্রসংঘের নজরে আনা হোক বিষয়টি। কেন্দ্র রাষ্ট্রসংঘের কাছে আবেদন করুক, শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য।’’
বিধানসভায় মমতা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকাকে লাগাতার অসম্মান করা হচ্ছে। সেসব ছবি গত কয়েকদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে ক্ষোভ ও রাগ তৈরি হয়েছে। এভাবে জাতীয় পতাকার অমর্যাদা করা ঠিক হচ্ছে না। আমি ইসকনের সঙ্গেও কথা বলেছি। এটা একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার যেটা আমাদের সবাইকে আঘাত দিচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেসব ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করব না আমি। কারণ, বাংলাদেশ অন্য দেশ। এটা আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভারতের জাতীয় পতাকার অপমান এভাবে মেনে নেওয়া যেতে পারে না। কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। ওই দেশে (বাংলাদেশ) কেন্দ্র সরকার প্রতিনিধি পাঠাক শান্তির বার্তা নিয়ে। তাদের ধর্ম পালন করার অধিকার আছে। কেন্দ্র রাষ্ট্রসংঘের কাছে তারা আবেদন করুক, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য।’’
মমতার বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ: ফখরুল
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবিলম্বে এই ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার রাতে লন্ডন থেকে মুঠোফোনে গণমাধ্যমের কাছে দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, “সকালে কয়েকটি পত্রিকায় একটা সংবাদ দেখলাম, পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো নিয়ে যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশে এটা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা হুমকি স্বরূপ এবং আমরা মনে করি এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাদের নেতাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে।’’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমি মনে করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। কারণ বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের করে স্বাধীন হয়েছে এবং সম্প্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছে এদেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে এই ধরনের চক্রান্তকে রুখে দাঁড়াবে।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হওয়া বা বিপন্ন হওয়ার যে অলীক কাহিনী ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে তা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
“আমরা বার বার বলেছি, এখানে ভারতের সাংবাদিকরা এসেছিলেন তারাও দেখেছেন বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি নেই। অথচ ভারতবর্ষের মিডিয়া ও তাদের নেতারা যেভাবে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যাকে প্রচার করছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি দিচ্ছেন তা কোনো মতেই বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।”
এটা মমতা ব্যানার্জির ‘তার ধরনের বক্তব্য’, সেভাবেই দেখতে চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে ‘তার ধরনের একটি বক্তব্য’ হিসেবে দেখতে চান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর আরজি জানাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন এ বিষয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যকে ‘মমতা ব্যানার্জির ধরনে’ এর হিসেবে দেখতে চাই।”
“মমতা ব্যানার্জি কেন এমন বক্তব্য দিলেন, আমরা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার রাজনীতির জন্য বিষয়টি ঠিক হয়নি। পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে আমরা স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চাই।”
এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাকে গ্রেপ্তার এবং আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে বলা হয়েছে, তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করতে পেরেছেন। কারণ, এই স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী বৈশ্বিক প্রচারণা চালাচ্ছে মন্তব্য করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আমরা মেনে নিচ্ছি, তাদের এ ক্ষেত্রে শক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। তবে আমরা সবাইকে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি।’
ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “প্রধানত ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার চাালানো হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক গণমাধ্যম ভারতীয় গণমাধ্যমকে উপজীব্য করে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তবে আমরা বলতে চাই, সব সরকারের আমলেই বছরে দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তবে সরকারের কাজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা সেটি করেছি। তবে দেশ ও দেশের বাইরে এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।”
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর জানিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বার্তা দিতে চাই, বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক কোনো অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। আমরা হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদ করতে চাই না। কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, “আমরা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক চাই। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী।”
কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয়দের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকে ‘উসকানিমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান, পরস্পরের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে ভারতের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চায় বাংলাদেশ।
হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “সোমবার দুপুরে আগরতলার হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এসময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
“দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।”
ভারতের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝি দূর হবে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “এ দেশের মানুষ ভারতবিরোধী নয়। আমাদের সঙ্গে যতটুকু ভুল-বোঝাবুঝি আছে, এটা দূর করা হবে। আমরা সব সময় চেষ্টা করি বন্ধুত্ব রক্ষা করার। তবে দুই দেশের মধ্যে সর্ম্পকটা হবে ওয়ান টু ওয়ান।”
বরিশালে মেরিন একাডেমিতে ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নদী, সাগর সব কিছুতে বাংলাদেশ ও ভারতের ভাগাভাগি থাকায় সম্পর্ক ভালো থাকার কথা।’’
ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে নৌ উপদেষ্টা বলেন, “সম্প্রতি যাকে নিয়ে এত হৈচৈ, তার সঙ্গে ইসকনের সম্পর্ক নেই বলে নিজেরাই বলেছে। আমি মনে করি, আমরা সবাই বাংলাদেশি।”
“এটাই আমাদের পরিচয়। যারা যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা টের পেয়েছে যে তাদের সঙ্গে কেউ নেই। আশা করি, এটা বড় কোনো বিষয় নয়।”
আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মশাল মিছিল করা হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় এ কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের (নুর) নেতারা।
এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘দিল্লির আগ্রাসন, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘দূতাবাসে হামলা কেন, দিল্লি তুই জবাব দে’, ‘তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’সহ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।
মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, হল পাড়া, মুহসিন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভের ডাক এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধে আদালতে রিট হয়েছে।
ঢাকা/সাইফ/রাসেল