শেখ হাসিনার সেই পিয়ন জাহাঙ্গীর দম্পতির বিরুদ্ধে ২ মামলা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

অবৈধ সম্পদ অর্জন, ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেন করে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই আলোচিত ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুদক উপপরিচালক রাশেদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালক পিয়াস পাল বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম ১৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। পেশায় গৃহিণী তার স্ত্রী কামরুন নাহার স্বামীর সহায়তায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন ৬ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকা।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম ৮টি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা এবং জমাকৃত অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এজাহার থেকে আরো জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের মোট সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৫ টাকা স্থাবর এবং ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৬ টাকা অস্থাবর। সব মিলিয়ে ১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৪ হাজার ৯৮১ টাকা। তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য ২১ কোটি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৬ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনে তার কোনো দায়-দেনার তথ্য অনুসন্ধানকালে পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমান ৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪ টাকা। অনুসন্ধানকালে এই আয়ের সঙ্গে তার অর্জিত সম্পদের মূল্যের সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি। ফলে তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অনুসন্ধানকালে আরো দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলম উপরোক্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে নিজ নামে ও তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। ভিন্ন ব্যক্তিগণের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তার হিসাবে টাকা জমা হওয়ার পর তিনি তা বিভিন্ন পন্থায় স্থানান্তর করেছেন। যার মধ্যে তিনি তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জের নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, খিলপাড়া শাখা, চাটখিল, নোয়াখালীতে একটি চলতি হিসাবে ২০২৪ সালের প্রথম ৫ মাসে ১৭৮ কোটি টাকা জমা এবং ১৭৮ কোটি ৯৩ টাকা ফান্ড ট্রান্সফার করেছেন। ঐ হিসাবটিতে সর্বমোট ৫৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩৫ টাকা জমা হয়েছে এবং প্রায় সমপরিমান টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলম তার নিজ ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করতে ৮টি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা এবং জমাকৃত অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এই লেনদেন সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, কামরুন নাহারের মোট সম্পদ ৬ কোটি ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৪৫০ টাকা স্থাবর এবং ২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৭১ টাকা অস্থাবর মিলিয়ে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৯২ হাজার ২১ টাকা। তার অর্জিত সম্পদের মূল্য ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৭ হাজার ৪৩২ টাকা।
কামরুন নাহারের গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমান ৩ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯০ টাকা। অনুসন্ধানকালে এই টাকার সঙ্গে তার অর্জিত সম্পদ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের দ্বারা তিনি উক্ত সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনুসন্ধানকালে আরো দেখা যায়, কামরুন নাহারের নামে ২টি ব্যাংকের ৭টি হিসাবে সর্বমোট ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার ৮৫৫ টাকা জমা এবং ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮৬ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও জমাকৃত উক্ত অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাসার পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’
তারপরেই আলোচনায় আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় বছরে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে সোয়া ১ কোটি টাকা এবং তার নিজের নামে আড়াই কোটি টাকা থাকার কথাও উল্লেখ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/তারা