সুন্দরবন রক্ষার প্রচারণায় ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার তাসফিয়া
বাংলাদেশের ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত সুন্দরবন রক্ষায় প্রচারণা চালিয়েছে কিশোর পরিবেশ অধিকার কর্মী ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার তাসফিয়া তাহসিন পূর্ণতা।
গত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার বনের বিভিন্ন পয়েন্টে এই প্রচার চালানো হয়। স্থানীয় জনতা, জেলে, ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রচারণা চালিয়েছে সে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে শনিবার পর্যন্ত সময়ে তাসফিয়া সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট, জামতলা, কটকা, করমজলে নিজ হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এসব পোস্টারে সুন্দরবন রক্ষা, বৃক্ষনিধন ও প্রাণি শিকার বন্ধ করা, কার্বন গ্যাসের নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নানা শ্লোগান ছিল।
তাসফিয়া এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর ভূমি দখল, বৃক্ষনিধন ও দূষণে বিপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ক্যাম্পেইন চালায়। ওইদিন সে সোনাদিয়া ও কালাদিয়া দ্বীপের বিভিন্ন অংশে নিজ হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে এ ক্যাম্পেইন করে। এসব পোস্টারে সোনাদিয়া দ্বীপ রক্ষা, কার্বন গ্যাসের নিঃসরণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নানা শ্লোগান ছিল। একই দিনে সে দ্বীপটির একাংশে পড়ে থাকা পানির বোতলসহ নানা প্লাস্টিক পণ্য, খাবারের মোড়ক, পলিথিন ইত্যাদি বর্জ্য অপসারণ করে।]
সুন্দরবনের করমজলে ক্যাম্পেইনে তাসফিয়া
তাসফিয়া তাহসিন পূর্ণতা একজন সৌখিন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ও চিত্রশিল্পী। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া ১৪ বছর বয়স থেকে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি করছে। পাখি ও প্রাণীদের ছবি আঁকাও তার অন্যতম শখ। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশ দূষণ, বনের বৃক্ষ নিধন, বন্যপ্রাণী শিকারের মতো বিষয়গুলো মোটাদাগে তার মনে দাগ কাটে। এ থেকে সে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
হিরনপয়েন্টে পূর্ণতা
তাসফিয়া তাহসিন পূর্ণতা তার ক্যাম্পেইন সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেছেন, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আমি বণ্যপ্রাণীদের ছবি তুলি। ছবি তুলতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, আমাদের বন, জলাভূমি, প্রাণীদের আবাসস্থল ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবেশ দূষণ তো আছেই। এসব কারণে আগের মত পাখি ও বণ্যপ্রাণী দেখা যাচ্ছে না। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাসফিয়া আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ তাদের একটি। উন্নত দেশগুলোর কর্মকাণ্ডের মাশুল দিচ্ছি আমরা। এর মধ্যে আমরা নিজেরাও যদি আমাদের বনগুলো ধংস করতে থাকি, বন্য প্রাণি শিকার ও পাচার করি, পরিবেশ দূষিত করতে থাকি, তাহলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।
তার মতে, বর্তমানে যারা কিশোর-কিশোরী আছে এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে। তাই নিজেদের প্রয়োজনেই কিশোর-কিশোরীসহ নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সোচ্চার হতে হবে।
তাসফিয়া বলেছেন, আমার এ ক্যাম্পেইনের অন্যতম উদ্দেশ্য স্থানীয় জনগণ, পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। এছাড়া গণমাধ্যমের সহযোগিতায় বিষয়গুলো নানা পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের নজরে আনা এবং জনমত তৈরি করা যাতে তারা এসব বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ