জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনে কোভিডের প্রভাব নিয়ে কর্মশালা
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ‘কোভিড-১৯ মহামারি ও জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসীদের স্থিতিস্থাপকতা ক্ষতির সমাধান' শীর্ষক প্রকল্পের জাতীয় স্তরের লার্নিং শেয়ারিং কর্মশালা রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়াটারএইড বাংলাদেশের উদ্যোগে হোটেল লেকশোতে বুধবার এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ওয়াটারএইড বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন (ওয়াশ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোকে একত্রিত করা হয় এই আয়োজনে। যাতে সামগ্রিক সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রকল্পের উদ্দেশ্য, অগ্রগতি, আগামী দিনের পরিকল্পনাসহ সামগ্রিক বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
প্রকল্পের লক্ষ্য-জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা ও সাতক্ষীরার বস্তিবাসীর জীবনে করোনার প্রভাবে আর্থ-সামাজিক ক্ষতি ও সমস্যা নিরূপন করা। প্রকল্পটি জলবায়ু অভিবাসীদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে ত্রিমুখী কিন্তু সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে মূল চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।
কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শহরতলীর মানুষের দুর্দশা মোকাবেলায় প্রকল্পের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের যোগসূত্র স্থাপন করে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের অভিজ্ঞতা, অন্তর্দৃষ্টি এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরতে পারেন। প্রকল্পের শেষদিকে আইসিডিডিআর,বি মাঠ পর্যায়ে একটি মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। অনুষ্ঠানে বিষয়টিও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
ইউনিভার্সাল অ্যাক্সেসের প্রোগ্রাম প্রধান বাবুল বালা আইসিডিডিআর,বি’র মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পাশাপাশি তাদের মূল্যায়ন ও পরামর্শও উপস্থাপন করেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ একটি বটম-আপ পদ্ধতি গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে সুবিধাভোগী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করা হয়।
সুবিধাভোগীদের বাস্তব জীবনের অ্যাকাউন্টে জুম ইন করার জন্য এবং প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষকে জড়িত করার জন্য একটি বটম-আপ পদ্ধতি গ্রহণ করে। রূপালী বেগম এবং জান্নাতুল ফেরদৌস ইরানি নামের দুজন সুবিধাভোগী অনুষ্ঠানে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা তাদের অতীত জীবনের পরিস্থিতি, বর্তমান জীবনযাত্রার মান এবং কীভাবে তারা আর্থিক স্বাধীনতা পেয়েছেন তা বর্ণনা করেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সেলিম সরোয়ার দৈনন্দিন কাজে পানির অপব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া যুব উন্নয়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক পারভেজ মোল্লা, শহরে অভিবাসন রোধ করতে গ্রামীণ এলাকার যুবকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইম্টে ব্রিজ কমিটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত। তিনি উচ্চ লবণাক্ত অঞ্চলে কোভিড-১৯ টিকাদানের ডোজ, পুকুরের স্যান্ড ফান্ডের ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, এই বছর আমরা যেমন তাপপ্রবাহ সহ্য করেছি, অনুমান করা যাচ্ছে শীতও তেমন প্রকট হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এর একটি বড় কারণ। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের অবশ্যই অনিশ্চয়তাগুলো মোকাবিলায় মনোনিবেশ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাকের সিবিএফ-এর হেড অফ সেক্রেটারিয়েট ড. মো. গোলাম রব্বানী কর্মশালার ত্রিভুজকরণ পদ্ধতির প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই প্রকল্পটি একটি বহু-ক্ষেত্রগত পদ্ধতির প্রথম উদাহরণ। প্রকল্প সম্পর্কে তৃণমূলের সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য প্রশংসা পাওয়ার মতো। প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাকে উৎসাহিত করা হলে সত্যিকারের রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের জন্য, আমাদের আরও সেক্টরের সাথে ওয়াশকে যুক্ত করার জন্য একটি বিস্তৃত, বহু-ক্ষেত্রীয় পদ্ধতির প্রয়োজন।”
সভাপতির বক্তব্যে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিসেস হাসিন জাহান প্রকল্পের ব্যর্থতা খুঁজে বের সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, চূড়ান্ত সফলতার জন্য ভুল এবং ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করা জরুরি।
জলবায়ু তহবিলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ওয়াশকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
নবলোক পরিষদের নির্বাহী পরিচালক কাজী রাজীব ইকবালের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
ঢাকা/হাসান/সাইফ