দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের ইজতেমা শুরু, মুসল্লির ঢল
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
পবিত্র কোরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক দ্বীনী সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার আনুষ্ঠানিক পর্ব।
ঢাকার হজক্যাম্প সংলগ্ন কাওলা (আশিয়ান সিটি) ময়দানে শুরু হয়েছে তিন দিনের সুন্নাতে ভরা আন্তর্জাতিক ইজতেমা।
ইজতেমার প্রথম দিনেই দেশের দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লির ঢল নেমেছে। চলছে ইমান ও আক্বিদা, আমল, আখলাকসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা।
পবিত্র কোরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক দ্বীনী সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার আনুষ্ঠানিক পর্ব।
ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় মূল্যবান বয়ান।
ফজরের নামাজের পর থেকে নামাজের ফজিলত, সময়ের গুরুত্ব, সন্তানের সুশিক্ষা ও পরিবারের সংশোধন ইত্যাদি বিষয়ে পবিত্র কোরআন-হাদিস দিয়ে আলোচনা করা হয়।
আলোচনায় অংশ নেন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগ মাওলানা মুহাম্মদ সোলায়মান মাদানী আত্তারী, মুহাম্মদ ইমরান আত্তারী, মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আত্তারী, মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম কাদেরি, মাওলানা নাইমুল হায়দার কাদেরী ও মুফতি মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী।
মোবাল্লিগগণ ইজতেমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহতায়ালার আপন প্রিয় মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতকে সব যুগে অতুলনীয় মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব দান করেছেন। তারা কেবল নিজেরাই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার মহান দায়িত্ব সর্বোত্তম পন্থায় আদায় করেননি, বরং মুসলমানদের নিজের এবং সমগ্র মানবজাতির সংশোধনের চেষ্টা করার মন-মানসিকতাও দিয়েছেন।
তারা বলেন, তাই সবাইকে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে নিজেকে এবং অন্যদের সংশোধনের চেষ্টা করে যেতে হবে; যাতে ধর্মীয় শিক্ষায় মানবিক মানুষ হতে পারি। আর সেটা সম্ভব হলে দেশে সন্ত্রাস, হানাহানি ও সমাজে কোনো প্রকার অশান্তি থাকবে না।
মোবাল্লিগগণ বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বলেছেন আমাদের সেভাবেই চলতে হবে। জীবন গঠনে শুদ্ধ নিয়তের পাশাপাশি হালাল রুজি অর্জন করতে হবে। আপনার ইমান-আক্বিদা পরিপূর্ণ হতে হবে। যে কাজই করেন না কেন সেটা আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে। আপনি যে ইবাদতই করেন না কেন, তা মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দান-সাদকায় মনযোগী হতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। উত্তম আখলাকের অধিকারী হতে হবে।
তারা বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কৃপাদৃষ্টি, সাহাবায়ে কিরামের বরকত, আওলিয়া কিরামের বরকতময় সম্পর্ক, ওলামা-মাশায়েখে আহলে সুন্নাতের স্নেহ এবং আমিরে আহলে সুন্নাতের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম ও মাযহাব মিল্লাত সকল তরিক্বত ও সর্বস্তরের সুন্নি মুসলমানদের আন্তরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতায় দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানুষদের সংশোধনের কাজ করে যাচ্ছে। যার কারণে অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি আজ পৃথিবীর প্রায় ২০০ দেশে পৌঁছে গেছে।
বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের এই ইজতেমা। ২১ ডিসেম্বর জোহরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। তিন দিনে দেশ-বিদেশের সুন্নি স্কলার, আলেমে দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয়, আকায়েদ, আমল ও আখলাক নিয়ে সারগর্ভ বয়ান করবেন।
দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জিম্মাদার (মিডিয়া বিভাগ) মুফতি জহিরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী আত্তারী বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী, সুফিবাদ ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদায় বিশ্বাসী, বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন হলো দাওয়াতে ইসলামী। সারা বিশ্বের মতো এ দেশে ২০১৫ সাল থেকে তিন দিনের এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইজতেমায় পবিত্র কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে ইমান-আক্বিদা ও আমল সম্পর্কে দিনরাত বয়ান করা হবে। কীভাবে নামাজ পড়তে হয়, ইসলামের ফরজ, সুন্নাত, নফল এবাদত কীভাবে করতে হয়; দালিলিক প্রমাণ দিয়ে হাতে-কলমে মুসল্লিদের শিখিয়ে দেওয়া হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, শান্তির পথে ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা, জেহাদের নামে জঙ্গিবাদের যে স্থান নেই- এ বিষয়টি জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে পবিত্র কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক সারগর্ভ আলোচনা হবে।
প্রতিদিন বয়ান শেষে মিলাদ, কিয়াম ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দেশ, জাতি ও মুসলিম বিশ্বের জন্য দোয়া করা হবে। সারা দেশ থেকে ইজতেমায় লাখ লাখ আশেকে রাসুলের ঢল নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল