চীন ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যোগাযোগ জোরদারে দিনব্যাপী আয়োজন
চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে গণমাধ্যমের যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব আরো জোরদার করতে ঢাকায় ‘বাংলাদেশ-চায়না’ আপন মিডিয়া ক্লাবের লোগো উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বরের) সকালে বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে তিনটি সেশনে পৃথক তিনটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) বাংলাদেশ ব্যুরো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এ এস এম জাহীদ, চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওফেং, সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি; সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সংগঠনের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা।
এ ছাড়াও এই উদ্যোগের সফলতা প্রত্যাশা করে বিশেষ ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
দিনের শুরুতে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ক্লাবের লোগো উন্মোচন করেন। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি এবং বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সিএমজি।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে চীনের গল্প আরো বেশি করে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের চীন সম্পর্কে জানা দরকার। আর এই জায়গায় মূল ভূমিকা রাখতে পারে সিএমজি।’’ গেল কয়েক দশকে চীনের অভাবনীয় উন্নতি, চীনের আধুনিক প্রযুক্তি, বাংলাদেশে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ সম্পর্কে আরো বেশি তথ্য বাংলাদেশি মিডিয়ার তুলে ধরা উচিত বলেও জানান তিনি।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক অব্যাহতভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। জাতি, বিশ্বাস ও ভাষার স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বেও আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতা বজায় রেখেছি।”
দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে বিকালে একই ভেন্যুতে ‘চায়না থ্রু লিটারেচার’ শীর্ষক রাইটার্স ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আরো বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘চীনের সঙ্গে আমাদের অনেক কিছু নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশিদের কথা মাথায় রেখে চীনের কুনমিংয়ে হেলথ সার্ভিস ও পর্যটন সার্ভিস গড়ে তুললে দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে যায়। চীনের সঙ্গে চিকিৎসাক্ষেত্রে আরো সম্পর্ক উন্নত করতে পারি আমরা।’’
লেখক-প্রকাশকদের নিয়ে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাওফেং বলেন, ‘‘চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন ও ঐতিহ্য চর্চার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরো গভীর হবে।’’
ফোরামে বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক, প্রকাশক ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে চীন বিষয়ক বইয়ের তিনজন লেখককে বিশেষ সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ সময় লেখক ও সাংবাদিক ড. মাহবুব হাসান, আবদুল হাই শিকদার, জাকির আবুজাফরসহ বিশিষ্ট লেখকরা চীন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনে দুই দেশের লেখকদের মধ্যে বিনিময়, পর্যটন, কর্মশালা ও অনুষ্ঠান আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এদিন সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মিট দ্য অডিয়েন্স’ শীর্ষক আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিএমজি বাংলা। ‘মিট দ্য অডিয়েন্স’ নামে এই অনুষ্ঠানে সিএমজির দর্শক, শ্রোতা, পাঠক এবং ফ্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়। সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়েসহ গণমাধ্যমটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা সিএমজির বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাদের মতামত ও পরামর্শ জানান।
এ সময় গণমাধ্যমটির দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকরা জানান, সিএমজি বাংলার অনুষ্ঠান দেখে তারা চীন সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন এবং অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিএমজি বাংলার কর্মকর্তারাও দর্শকদের অভিমত শুনে ভবিষ্যতে আরো ভালো অনুষ্ঠান তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে চায়না মিডিয়া গ্রুপের মিডিয়া সহযোগী আরটিভি, দীপ্তটিভি, বাংলাভিশন, রেডিও টুডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দর্শকরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কুইজ ও র্যাফেলে ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচসহ বিভিন্ন পুরস্কার তুলেন দেন অতিথিরা।
এর আগে, সিএমজি ঢাকা স্টেশনের বার্তা সম্পাদক শান্তা মারিয়া এবং ফিচার সম্পাদক ফয়সল আবদুল্লাহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও রেডিওতে প্রচারিত সিএমজির টিভি ও রেডিও অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব আরো জোরদার করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ