ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ১৯ ১৪৩১

‘উন্নয়ন ও মানবিক প্রচেষ্টার রূপান্তর ঘটাচ্ছে স্থানীয়করণ’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪  
‘উন্নয়ন ও মানবিক প্রচেষ্টার রূপান্তর ঘটাচ্ছে স্থানীয়করণ’

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বড় পরিবর্তন ঘটাচ্ছে লোকালাইজেশন বা স্থানীয়করণ। এই পদ্ধতি নিজেদের উন্নয়নে স্থানীয় মানুষদের আরও বেশি শক্তিশালী করছে এবং উন্নয়ন অংশীদারদের আবহমান সহায়তা প্রদানের পদ্ধতিসমূহের বিপরীতে আরো সহজ ও কার্যকরি পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

বাংলাদেশে শেয়ার ট্রাস্টের লোকাল কোয়ালিশন অ্যাক্সিলারেটর (এলসিএ) উদ্যোগের মাধ্যমে সুন্দরবন কোয়ালিশন এই পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এই কোয়ালিশনের মূল লক্ষ্য হলো কমিউনিটি ও কমিউনিটি-বেসড সংগঠনগুলোর (সিবিও) মাধ্যমে মানুষদের ক্ষমতায়ন করা।

২০২২ সালে উত্তরণ, সিএনআরএস, জাগো নারী এবং আভাস একত্র হয়ে সুন্দরবন কোয়ালিশন গঠন করে। এই জোটের আওতায় সুন্দরবন অঞ্চলের চারটি জেলার ১২টি সিবিও কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষ কমিউনিটি গড়ে তোলা এবং স্থানীয় মানুষের মাধ্যমেই সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা ও সমাধান নিশ্চিত করা। সুন্দরবন কোয়ালিশনের মাধ্যমে গত তিন বছরে, শ্যামনগর, কয়রা, কলাপাড়া ও তালতলীর মতো সুন্দরবন অধ্যুশ্যিত এলাকায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে।

এই কোয়ালিশনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক তাদের সরাসরি অর্থায়নের কৌশল। এতে মোট বাজেটের ৮০ শতাংশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবং ২০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় হয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থার তুলনায় পরিচালন ব্যয় কমেছে ৩২ শতাংশ। এছাড়া এই পদ্ধতিতে কমিউনিটির সদস্যরাও বিভিন্ন ভাবে (শ্রম, জমি এবং অর্থসহ) অবদান রাখে, যা স্থানীয় নেতৃত্বকে আরো বেশি শক্তিশালী করে।

এই কোয়ালিশন ১৬ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নেন্স কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত, যা সব সদস্যের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। দুর্যোগ প্রতিরোধ, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, ওয়াশ, জীবিকা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে যৌথ কর্মপরিকল্পনা করা হয় এবং কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়।

সুন্দরবন কোয়ালিশনের আয়োজনে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্ট্রেনদেনিং ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স থ্রু দ্য এলসিএ মডেল: লেসনস ফ্রম বাংলাদেশ কোস্টাল রিজিওন’ শীর্ষক রাউন্ড টেবিল আলোচনা। এতে কোয়ালিশনের অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা হয়।

লোকালাইজেশন নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা অন্যতম আন্তর্জাতিক সংগঠন স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাজিদ রায়হান বলেন, ‘লোকালাইজেশন ধারণাটি এসেছে গ্লোবাল নর্থ থেকে। ফলে এর স্পষ্ট ন্যারেটিভ প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগ, রাজনৈতিক সংকট এবং যুদ্ধ বাড়ছে। একই সঙ্গে কমে আসছে ফান্ড। তাই আমাদের এই সীমিত ফান্ড আরও কার্যকরভাবে কীভাবে ব্যবহার করা যায় এবং কমিউনিটি বেসড সংগঠনগুলোর কীভাবে ক্ষমতায়ন করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। আরটিএফ এবং এলসিএর মতো প্রকল্পগুলো লোকালাইজেশনের ন্যারেটিভ তৈরির প্রচেষ্টা। এই প্রকল্পগুলো লোকালাইজেশনকে স্থানীয়রা কীভাবে দেখে তা বুঝতে সাহায্য করবে; বিশেষ করে ফান্ড কীভাবে ব্যয় হবে, কীভাবে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা যাবে এবং কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা যাবে।’

ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী এবং ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের সহায়তা করা। লোকালাইজেশন নিয়ে আলোচনায় আমরা সক্ষমতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি পেয়েছি। আমরা এসব বিষয়েও কাজ করি। আসলে আমরা সবাই ঝুঁকি ভাগাভাগি করি এবং নির্দিষ্ট প্রকিউরমেন্ট অনুযায়ী কাজ করি। আমাদের লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করা এবং ঘাটতি কমাতে মেন্টরিং দেওয়া।”

বাংলাদেশে এলসিএ মডেল সফলতা পেলেও এটি এখনো কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যেমন বাংলাদেশ এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ যা অনিবন্ধিত সিবিওগুলোকে বিদেশি তহবিল পাওয়া থেকে বিরত রাখে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে সীমিত বাজেট ও সক্ষমতার ঘাটতি। যদিও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা, কোয়ালিশন তৈরি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। লোকালাইজেশনে আরও জোর দিতে নীতি সংস্কার, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ফান্ডিং মডেলের সুপারিশও করেন বিশেষজ্ঞরা। এসব পদক্ষেপ কমিউনিটিগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় অগ্রাধিকার অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়