ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ১৯ ১৪৩১

আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৪:৪৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের কর্মসূচির বদলে মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির ঘোষণা এলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় সংগঠনটি।

এতে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়পোযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ৩১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে জানানো হয়, “হাজারো শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জন-আকাঙ্ক্ষার দলিলস্বরূপ “জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র” অত্যাবশ্যক ছিল। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম।”

“আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্কূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্র- জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান- আপনারা যে উদ্দীপনায় সংগঠিত হয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীকালের (মঙ্গলবার) কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।”

রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কর্মসূচি আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবারই করার ঘোষণাা দেন মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। 

রাত ১টার দিকে ঢাকার বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে ৩১ ডিসেম্বরেই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তাদের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঘোষণাপত্র কীভাবে দেওয়া হবে, তা জানানো হবে মঙ্গলবার বিকেলে।” এরপর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা জানায়, কর্মসূচির নাম হবে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’। সেখানে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে না। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য শাহাদাদ হোসেন শাওন বলেন, “আমাদের সমাবেশ হবে। সরকার জুলাই গনঅভ্যুত্থানের যে ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা বলেছে, সেখান থেকে সরকার যেন সরে না আসে, সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করতে আমাদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।”

“এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে ঢাকার পথে লোকজন রওনা হয়েছে,” বলেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে। এই সমাবেশ থেকে তাদের জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার কথা ছিল। 

এর আগে স্লোগান স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে বাংলামোটরের কার্যালয়। সেখানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়ার পর মিছিল নিয়ে তারা শহীদ মিনারে যায়। শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্ররা।

সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকশ শিক্ষার্থীকে। ‘সিদ্ধান্ত কে দেবে, বিপ্লবী না সরকার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ এই ধরনের স্লোগান শোনা যায় তাদের মুখে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সোমবার রাতে ঘোষণা আসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তারা রাত ১২টায় ব্রিফ করা হবে। সেখান থেকে আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঘোষণাপত্র কীভাবে দেওয়া হবে, তা জানানো হবে মঙ্গলবার বিকেলে।

এর আগে শনিবার ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, তারা ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণপত্র প্রকাশ করবে এদিন। এ নিয়ে জোর আলোচনার মধ্যেই রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, সরকারই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।

এরপরই বলাবলি শুরু হয়, বৈষম্যবিরোধীরা তাদের ৩১ ডিসেম্বরের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তবে এই ব্যানারের শিক্ষার্থীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত জানাতে রাত ১২টায় ব্রিফ করার ঘোষণা আসে।

এদিকে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার সামনে এক জরুরি সংবাদ ব্রিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।’’

শফিকুল আলম জানান, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত, ঐক্যের ভিত্তি ও জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হবে।

‘‘আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’’

ঢাকা/সুকান্ত/রাসেল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়