দেশে ফেরার অনিশ্চতার মধ্যে হাসপাতালে চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী
কলকাতা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
চিন্ময় প্রভুর (ডানে) আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।
আর দেশে ফিরবেন কি না, সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের বিতর্কিত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ! মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কলকাতার এসএসকেএম নেওয়া হয় তাকে।
অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে রবীন্দ্র ঘোষ কলকাতায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। তার দেশে ফেরার বিষয়ে অনিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলেন তিনি। কারণ হিসেবে সামনে আনেন অসুস্থতা ও চিকিৎসার কথা।
তখনই সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন, ২ জানুয়ারি চিন্ময় প্রভুর শুনানিতে যাওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ কেন সেই সিদ্ধান্ত বদলালেন রবীন্দ্র ঘোষ; যেখানে কয়েকদিন আগেও তো তিনি বলেছিলেন, যাই হোক না কেন নিজের দেশ বাংলাদেশে তিনি ফিরবেনই। গ্রেপ্তার হতে হলে হবেন, প্রাণেনাশের আশঙ্কাকেও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অথচ এখন বলছেন, আপাতত দেশে ফেরা হচ্ছে না।
ইসকন থেকে বিতাড়িত কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর শুনানি হওয়ার কথা ২ জানুয়ারি। রবীন্দ্র ঘোষ ভারতের কলকাতায় গিয়ে জোরগলায় বলেছিলেন, তিনি ওই শুনানিতে অংশ নেবেন।
দিনের পর দিন ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডায় শামিল হতে দেখা গেছে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে। দেশে ফেরা নিয়েও সুর চওড়া করে কথা বলেছেন। তবে দেশে ফেরার সময় আসতেই পাল্টি মারলেন সুপ্রিম কোর্টের এই বয়স্ক আইনজীবী।
ঘটনা সপ্তাহ দুয়েক আগের। ভারতীয় ভিসা নীতি লঙ্ঘন করে ভারতীয় গণমাধ্যমে আচমকাই রীতিমতো নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন রবীন্দ্র ঘোষ। নিজেকে চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর আইনজীবী দাবি করে রবীন্দ্র ঘোষ নামে ওই আইনজীবী বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জনগণকে নিয়ে শরিক হন ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যা প্রোপাগান্ডায়।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এমনকি রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে কখনো সংবাদ সম্মেলন করে, কখনো টেলিভিশনের লাইভ টক শোতে অংশ নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন রবীন্দ্র ঘোষ। ৫ আগস্টের পর ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ-সংক্রান্ত মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে যে সময় ভারতীয় জনগণের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে বিদ্বেষ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানো হয়েছে, ঠিক তখনই রবীন্দ্র ঘোষের এসব মন্তব্য রীতিমতো ভারতীয় গণমাধ্যমের পালে হাওয়া জোগায়। ভারতীয় গণমাধ্যম তাকে রাতারাতি নায়কের তকমা দেয়।
কিন্তু নায়কের হিরোইজম সীমাবদ্ধ থাকলো ভারতীয় গণমাধ্যমের পর্দাতেই। মঙ্গলবার বাংলাদেশি আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের দেশে না ফেরার বিষয়ে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বাংলাদেশি গণমাধ্যমের নাম শুনেই তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
যদিও বাংলাদেশি এই আইনজীবীর ভারতীয় নাগরিক ছেলে রাহুল ঘোষ জানান, তার বাবা রবীন্দ্র ঘোষ চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন। কিন্তু চিকিৎসার যে পর্যায়ে তিনি রয়েছেন, তাতে আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে। তার মায়েরও চোখের অপারেশন হতে পারে আগামী ২৬ জানুয়ারি। ফলে আপাতত বাংলাদেশে ফিরবেন না তিনি। তবে বাংলাদেশে যে একেবারেই ফিরবেন না, বিষয়টা এমন নয়।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক নেতার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকায় আপাতত রবীন্দ্র ঘোষকে দেশে ফিরতে নিষেধ করেছেন তারা। আগামী ২ জানুয়ারি কলকাতা প্রেসক্লাবে এ বিষয়ে এবং বাংলাদেশ-সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।
এদিকে নায়ক খেতাব পাওয়ার পর মঙ্গলবার রবীন্দ্র ঘোষের বাড়িতে এসে তার সাথে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। এর আগে বিজেপি, কংগ্রেস থেকে শুরু করে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সংগঠন একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তার সঙ্গে দেখা করে তাকে সংবর্ধনা জানায়। কলকাতার ইসকনের বৈঠকেও অংশ নেন তিনি।
নিজেকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দাবি করা রবীন্দ্র ঘোষ বাংলাদেশি নাগরিক হলেও তার দুই সন্তান ভারতীয় নাগরিক পরিচয়ে থাকেন ভারতে। তাদের পিতার পরিচয় হিসেবেও তারা ব্যবহার করেন রবীন্দ্র ঘোষের নাম। যদিও ভারত দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না।
ঢাকা/সুচরিতা/সাইফ