কিরিবাতি থেকে বাংলাদেশ, পঁচিশের বর্ণিল বরণ
নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
খ্রিষ্টীয় ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাচ্ছে বিশ্ব, বরণ করে নিচ্ছে বর্ণিল আয়োজনে। দেশে দেশে খ্রিষ্টীয় নতুন বর্ষবরণে দেখা গেছে নানা রঙের সাজ-সমাবেশ। এরই মধ্যে মানবগ্রহের আকাশ জ্বলে ওঠেছে আতশবাজির আলোকচ্ছটায়।
এবার নতুন বছর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দকে বিশ্বে প্রথম বরণ করে নেয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট্ট দ্বীপদেশ কিরিবাতি মানুষ। সে দেশেই থার্টি ফার্স্টের ঘড়ির কাঁটা সবার আগে রাত ১১টা ৫৯ সেকেন্ডে টিক টিক করে ওঠে। শুরু হয় নতুন বছরকে স্বাগত জানানো। এরপর নতুন ক্যালেন্ডারে প্রবেশ করে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। আতশবাজি আর রঙিন বেলুন উড়িয়ে বরণ করা হয় নতুন বছরকে। পৃথিবীর পূবের ভূগোলে সময় গড়াতে গড়াতে তা পৌঁছে যায় সারা বিশ্বে। উচ্ছ্বাস আর আনন্দে নতুন বছর বরণে মেতে ওঠে বিশ্ববাসী।
সেই ধারায় সব বাধা, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টার পর যুক্ত হয় ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ। চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে পটকা আর আতশবাজির গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। দেখা যায় আকাশে বর্ণিল আলোকচ্ছটা। রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের পর শুরু হয় আতশবাজি ফোটানোর মহাযজ্ঞ। কয়েক ঘণ্টা ধরে পুরো ঢাকায় শোনা যায় নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর ধুম ধুম, গুড়ুম গুড়ুম শব্দ।
চারদিকের শব্দ আর আনন্দ আয়োজন জানান দিতে থাকল নতুন বছর এসে গেছে, শুরু হয়েছে ১ জানুয়ারি ২০২৫। পাড়া-মহল্লা থেকে এলাকার সড়ক-সর্বত্রই দেখা গেছে আনন্দ আয়োজন আর পটাকা ফোটানোর উৎসব। বন্ধুবান্ধব, স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা মিলে মেতে ওঠে বর্ষবরণের নানা আয়োজনে। আতশবাজি-পটকা ফোটার পাশাপাশি ভেসে আসতে থাকে গান-বাজনার আওয়াজ। আর তাতে পৌষের নীবরতা উবে গিয়ে কম্পিত হতে থাকে ঢাকা।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ঢাকার মানুষ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, স্বজনদের নিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতেছেন। বাড়ির ছাদে ছাদে দেখা গেছে ঘরোয়া উদযাপনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে মানুষ।
২০২৫ সালকে বরণে এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করে; যার প্রভাব দেখা যায় আকাশে। এবার ফানুস সে অর্থে দেখা যায়নি বলা যায়। তবে আতশবাজি ফোটানোর শব্দে প্রকম্পিত হয় পুরো ঢাকা এবং দেশের বড় বড় শহর।
খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে বরণ করতে বহু মানুষ গেছেন কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে। সেখানেও নানা আয়োজনে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে। আতশবাজির সঙ্গে কাছের ও দূরের উল্লাসধ্বনিও ভেসে আসে কানে। সব মিলে চিরচেনা রূপেই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা। এই রাতে রঙিন আলোয় সাজানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা।
২০২৫ সালকে স্বাগত জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, “নতুন বছরে আমরা দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন এক সমাজ, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী এক ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সঠিক পথের দিশা পাব।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “নতুন বছরের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।”
বিশ্বজুড়ে বর্ষবরণ
নিউজিল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ঝলমলে আতশবাজির মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয় খ্রিষ্টীয় ২০২৫-কে। আতশবাজির ঝলকানিতে ছেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার আকাশ। বিশেষ করে সিডনি অপেরার আলোকসজ্জা বরাবরের মতো এবারও ছিল নজরকাড়া।
জাপানের ঘড়ির কাঁটা ১১টা ৫৯ মিনিট পার হয় নিউজিল্যান্ডের পরই। ঐতিহ্য অনুযায়ী দেশটির রাজধানী টোকিওর তোদাই-জি মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে।
এরপর দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও শ্রীলঙ্কা, চীন তাদের নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে প্রবেশ করে, আলোকচ্ছটায় ভরে দেশগুলোর আকাশ। এরপর নতুন বছরকে যুক্তরাজ্যসহ বরণ করে নেবে পুরো ইউরোপ। তারপর বর্ষবরণের আলোকোজ্জ্বল আয়োজন দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো পশ্চিমা দুনিয়ায়। অবশ্য ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা নতুন বছরে প্রবেশ করে বলতে গেলে অন্যান্য সব দেশের পরে। আর অঞ্চল হিসেবে সবার পরে নতুন বছরে প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলো।
যুক্তরাজ্যে আবহাওয়া ভালো না হওয়ায় এবার নবববর্ষের কিছু অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। আর দক্ষিণ কোরিয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার শোক কাটিয়ে উঠতে না পারায় এবার বেশ নীরবেই নতুন বছরে প্রবেশ করছে দেশটি।
নতুন বছরে নব প্রত্যাশার বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশ্বনেতারা।
ঢাকা/রাসেল